ঢাকা ০৮:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫

    জুলাই ঘোষণাপত্রে বিভাজনের প্রতিবাদে উপস্থিত হননি হাসনাত, শোকজ নোটিশ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৮:৪৬:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৫১ বার পড়া হয়েছে

    জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে আয়োজিত ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন এবং শহীদ-আহতদের বাদ দিয়ে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক পেজে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে দেওয়া ব্যাখ্যায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

    হাসনাত জানান, ৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার পেছনে তার অবস্থান ছিল একটি অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি ‘নীরব প্রতিবাদ’। তিনি লেখেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি জানতে পারেন, আন্দোলনের সময় আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেক সহকর্মীকে এই আয়োজনে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি বিষয়টিকে রাজনৈতিক নয়, বরং নৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখেছেন। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন অনুষ্ঠান বর্জনের এবং পরদিন ঢাকার বাইরে চলে যাওয়ার।

    এনসিপির পক্ষ থেকে বুধবার (৬ আগস্ট) হাসনাতসহ পাঁচ নেতাকে কক্সবাজার সফরের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। এতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের আহ্বায়ক ও মুখ্য সমন্বয়কের কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

    নোটিশের জবাবে হাসনাত বলেন, ৪ আগস্ট রাতে তিনি প্রথমে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে জানান যে তিনি স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের সফরে যাচ্ছেন। নাসীরুদ্দীন আহ্বায়ককে তা জানানোর প্রতিশ্রুতি দেন এবং পরে নিশ্চিত করেন যে, আহ্বায়ক সম্মতি দিয়েছেন। এরপর সফরে তার সঙ্গে যুক্ত হন নাসীরুদ্দীন, সারজিস আলম ও তার স্ত্রী তাসনিম জারা, এবং খালেদ-সাইফুল্লাহ দম্পতি।

    এ সফরের ছবি ও ভিডিও তুলে তা রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে কিছু গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাসনাত। তিনি অভিযোগ করেন, এতে তাঁদের কর্মকাণ্ডকে ‘অপরাধপ্রবণ’ ও ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকের গুজবও ছড়ানো হয়েছে, যদিও তিনি তখন বাংলাদেশে ছিলেন না। এই অপপ্রচারকে তিনি নতুন বাংলাদেশে পুরোনো গোয়েন্দা অভ্যাসের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং তীব্র নিন্দা জানান।

    শোকজ নোটিশে ব্যবহার করা ভাষা এবং তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠনে কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে হলে নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র বা আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ থাকতে হয়, কিন্তু তাকে দেওয়া শোকজে এমন কিছু উল্লেখ নেই। তিনি দাবি করেন, তিনি কোনো দলীয় আইন বা নিয়ম ভাঙেননি।

    এছাড়া, সফরসঙ্গী এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘স্লাট শেমিং’–এর ঘটনাকে কক্সবাজার সফরের সবচেয়ে দুঃখজনক ও নিন্দনীয় দিক হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। একে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করার অপচেষ্টা বলে মনে করেন। হাসনাত বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের সহায়তায় একজন নারীর বিরুদ্ধে এমন হীন আক্রমণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

    তাঁর মতে, দলীয়ভাবে এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তার পরিবর্তে উল্টো শোকজ করে মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তিনি এখনো এনসিপির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ আছেন এবং বিশ্বাস করেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক সহনশীলতা বজায় রেখে দল আরও রাজনৈতিকভাবে পরিণত হতে পারে। তিনি ‘বিধিবহির্ভূত’ শোকজ ও গণমাধ্যমে তা প্রকাশ নিয়ে দলের ভেতরে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনার আহ্বান জানান।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    জুলাই ঘোষণাপত্রে বিভাজনের প্রতিবাদে উপস্থিত হননি হাসনাত, শোকজ নোটিশ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ

    আপডেট সময় ০৮:৪৬:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

    জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে আয়োজিত ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন এবং শহীদ-আহতদের বাদ দিয়ে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক পেজে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে দেওয়া ব্যাখ্যায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

    হাসনাত জানান, ৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার পেছনে তার অবস্থান ছিল একটি অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি ‘নীরব প্রতিবাদ’। তিনি লেখেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি জানতে পারেন, আন্দোলনের সময় আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেক সহকর্মীকে এই আয়োজনে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি বিষয়টিকে রাজনৈতিক নয়, বরং নৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখেছেন। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন অনুষ্ঠান বর্জনের এবং পরদিন ঢাকার বাইরে চলে যাওয়ার।

    এনসিপির পক্ষ থেকে বুধবার (৬ আগস্ট) হাসনাতসহ পাঁচ নেতাকে কক্সবাজার সফরের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। এতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের আহ্বায়ক ও মুখ্য সমন্বয়কের কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

    নোটিশের জবাবে হাসনাত বলেন, ৪ আগস্ট রাতে তিনি প্রথমে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে জানান যে তিনি স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের সফরে যাচ্ছেন। নাসীরুদ্দীন আহ্বায়ককে তা জানানোর প্রতিশ্রুতি দেন এবং পরে নিশ্চিত করেন যে, আহ্বায়ক সম্মতি দিয়েছেন। এরপর সফরে তার সঙ্গে যুক্ত হন নাসীরুদ্দীন, সারজিস আলম ও তার স্ত্রী তাসনিম জারা, এবং খালেদ-সাইফুল্লাহ দম্পতি।

    এ সফরের ছবি ও ভিডিও তুলে তা রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে কিছু গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাসনাত। তিনি অভিযোগ করেন, এতে তাঁদের কর্মকাণ্ডকে ‘অপরাধপ্রবণ’ ও ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকের গুজবও ছড়ানো হয়েছে, যদিও তিনি তখন বাংলাদেশে ছিলেন না। এই অপপ্রচারকে তিনি নতুন বাংলাদেশে পুরোনো গোয়েন্দা অভ্যাসের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং তীব্র নিন্দা জানান।

    শোকজ নোটিশে ব্যবহার করা ভাষা এবং তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠনে কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে হলে নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র বা আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ থাকতে হয়, কিন্তু তাকে দেওয়া শোকজে এমন কিছু উল্লেখ নেই। তিনি দাবি করেন, তিনি কোনো দলীয় আইন বা নিয়ম ভাঙেননি।

    এছাড়া, সফরসঙ্গী এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘স্লাট শেমিং’–এর ঘটনাকে কক্সবাজার সফরের সবচেয়ে দুঃখজনক ও নিন্দনীয় দিক হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। একে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করার অপচেষ্টা বলে মনে করেন। হাসনাত বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের সহায়তায় একজন নারীর বিরুদ্ধে এমন হীন আক্রমণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

    তাঁর মতে, দলীয়ভাবে এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তার পরিবর্তে উল্টো শোকজ করে মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তিনি এখনো এনসিপির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ আছেন এবং বিশ্বাস করেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক সহনশীলতা বজায় রেখে দল আরও রাজনৈতিকভাবে পরিণত হতে পারে। তিনি ‘বিধিবহির্ভূত’ শোকজ ও গণমাধ্যমে তা প্রকাশ নিয়ে দলের ভেতরে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনার আহ্বান জানান।