ঢাকা ০১:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

    মওলানা ভাসানী সেতু’র উদ্বোধন, গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামের মানুষের প্রতীক্ষার অবসান

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৪:৪২:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে

    উত্তর জনপদের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে গাইবান্ধার হরিপুর-চিলমারী সড়কের ওপর নির্মিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’র উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুর উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

    উদ্বোধনের পরপরই সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুফতি মো. ওমর ফারুক মোনাজাত করেন। এরপর ফিতা কেটে সেতুর দ্বার খুলে দেওয়া হয়। এসময় উৎসুক জনতার ভিড় সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশ বেগ পেতে হয়।

    সেতুর উদ্বোধনের আগে থেকেই পুরো এলাকাজুড়ে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ভোর থেকেই তিস্তা পাড়ে দুই জেলার শত শত দর্শনার্থী এবং সুন্দরগঞ্জ-চিলমারী উপজেলার হাজারো সাধারণ মানুষ ভিড় করেন এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ায় তাদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে উচ্ছ্বাস।

    গত ১০ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ সেতুটির নামকরণ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ এই পিসি গার্ডার সেতুটির নাম ‘মওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’ রাখা হয়। ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। নানা জটিলতা এবং একাধিকবার তারিখ পরিবর্তনের পর অবশেষে ১১ বছর পর সেতুটি চালু হলো।

    এলজিইডি সূত্র জানায়, সৌদি সরকারের অর্থায়নে ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, যার ব্যয় হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। ১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের এই পিসি গার্ডার সেতুটি এলজিইডির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সেতুকে ঘিরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক্সেস সড়ক, ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু নির্মিত হয়েছে।

    এই সেতু চালু হওয়ায় গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্বল্প খরচে কৃষি ও শিল্পপণ্যের পরিবহন সম্ভব হবে এবং ছোট-মাঝারি শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। এছাড়াও, ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দরের দূরত্ব ৪০-১০০ কিলোমিটার কমে আসবে। পর্যটনেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

    তবে সেতুর নামকরণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা ও সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা শরিতুল্যাহ মাস্টারের নামে নামকরণের দাবি জানিয়েছিলেন। তাদের দাবি, ১৯৯৫ সাল থেকে শরিতুল্যাহ মাস্টার ‘তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করে এই সেতুটির জন্য আন্দোলন চালিয়েছেন। স্থানীয়রা চান, তার স্মৃতি অম্লান রাখতে সেতুর নামকরণ ‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ করা হোক। তবে সব বিতর্ক ছাপিয়ে দুই পারের মানুষ এখন উচ্ছ্বসিত এবং নতুন এক যাত্রার স্বপ্ন দেখছেন।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    মওলানা ভাসানী সেতু’র উদ্বোধন, গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামের মানুষের প্রতীক্ষার অবসান

    আপডেট সময় ০৪:৪২:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

    উত্তর জনপদের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে গাইবান্ধার হরিপুর-চিলমারী সড়কের ওপর নির্মিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’র উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুর উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

    উদ্বোধনের পরপরই সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুফতি মো. ওমর ফারুক মোনাজাত করেন। এরপর ফিতা কেটে সেতুর দ্বার খুলে দেওয়া হয়। এসময় উৎসুক জনতার ভিড় সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশ বেগ পেতে হয়।

    সেতুর উদ্বোধনের আগে থেকেই পুরো এলাকাজুড়ে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ভোর থেকেই তিস্তা পাড়ে দুই জেলার শত শত দর্শনার্থী এবং সুন্দরগঞ্জ-চিলমারী উপজেলার হাজারো সাধারণ মানুষ ভিড় করেন এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ায় তাদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে উচ্ছ্বাস।

    গত ১০ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ সেতুটির নামকরণ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ এই পিসি গার্ডার সেতুটির নাম ‘মওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’ রাখা হয়। ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। নানা জটিলতা এবং একাধিকবার তারিখ পরিবর্তনের পর অবশেষে ১১ বছর পর সেতুটি চালু হলো।

    এলজিইডি সূত্র জানায়, সৌদি সরকারের অর্থায়নে ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, যার ব্যয় হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। ১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের এই পিসি গার্ডার সেতুটি এলজিইডির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সেতুকে ঘিরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক্সেস সড়ক, ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু নির্মিত হয়েছে।

    এই সেতু চালু হওয়ায় গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্বল্প খরচে কৃষি ও শিল্পপণ্যের পরিবহন সম্ভব হবে এবং ছোট-মাঝারি শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। এছাড়াও, ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দরের দূরত্ব ৪০-১০০ কিলোমিটার কমে আসবে। পর্যটনেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

    তবে সেতুর নামকরণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা ও সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা শরিতুল্যাহ মাস্টারের নামে নামকরণের দাবি জানিয়েছিলেন। তাদের দাবি, ১৯৯৫ সাল থেকে শরিতুল্যাহ মাস্টার ‘তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করে এই সেতুটির জন্য আন্দোলন চালিয়েছেন। স্থানীয়রা চান, তার স্মৃতি অম্লান রাখতে সেতুর নামকরণ ‘শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু’ করা হোক। তবে সব বিতর্ক ছাপিয়ে দুই পারের মানুষ এখন উচ্ছ্বসিত এবং নতুন এক যাত্রার স্বপ্ন দেখছেন।