ঢাকা ০৭:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫

    অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু, প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচন-প্রেস সচিব

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৬:১২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে

    আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) থেকে শুরু হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়। এই অধ্যায়ের প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজন। দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

    সকাল সাড়ে ১০টায় বৈঠকটি শুরু হয় এবং দুপুরে তা শেষ হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে নির্বাচন, প্রশাসনিক প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, “গত ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে, আজ থেকে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু।

    এ পর্যায়ে আমাদের মূল দায়িত্ব হলো নির্বাচন আয়োজন।” তিনি আরও বলেন, “গতকাল নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে, রমজানের আগেই, নির্বাচন আয়োজন করতে।” প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, এখন থেকে সরকারের পূর্ণ মনোযোগ নির্বাচন আয়োজনের দিকেই থাকবে।

    নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখ ঘোষণা করবে বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, “নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে শুধু একটি সময়সীমা দেওয়া হয়েছে।” সংস্কার ও ট্রায়াল—এই দুই বিষয়কেও অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, “নির্বাচন ছাড়াও সংস্কার ও বিচারিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচন।”

    নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে এসপি ও ওসিদের লটারির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। ডিসি নিয়োগ নিয়ে আলোচনা চলমান আছে এবং খুব শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
    নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা প্রস্তুতির বিষয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। প্রেস সচিব জানান, “গত এক মাসে প্রধান উপদেষ্টা দুইবার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

    আনসার, পুলিশ এবং সেনাবাহিনী নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। আগের প্রস্তাবনায় ছিল ৮ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হবে, এখন দেখা হচ্ছে আরও ৫০ হাজার বাড়ানো সম্ভব কিনা।” তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শুরুতে ৬০ হাজার সদস্যের কথা বলা হয়েছিল, এখন চিন্তা করা হচ্ছে সংখ্যা আরও বাড়ানোর।”

    আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা—এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যতদিন না পর্যন্ত তাদের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান ট্রায়াল শেষ হচ্ছে, ততদিন তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও আলোচনা চলছে।”

    রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে কি না—এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন ঘোষণাকে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। তাদের সঙ্গে আগেও আলোচনা হয়েছে, সামনে আরও আলোচনা চলবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে খুব ভালো একটি নির্বাচন হবে।”

    লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত হবে কিনা—এই বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আগামি ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে, তা হবে ফ্রি, ফেয়ার এবং উৎসবমুখর। মানুষ আনন্দের সঙ্গে ভোট দেবে। এতে কোনো পক্ষই অভিযোগ তোলার সুযোগ পাবে না।”

    প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের পক্ষ থেকে বারবার জোর দিয়ে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনকে ঘিরেই এখন পুরো সরকারের মনোযোগ। নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক এবং নিরপেক্ষ হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু, প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচন-প্রেস সচিব

    আপডেট সময় ০৬:১২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

    আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) থেকে শুরু হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়। এই অধ্যায়ের প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজন। দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

    সকাল সাড়ে ১০টায় বৈঠকটি শুরু হয় এবং দুপুরে তা শেষ হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে নির্বাচন, প্রশাসনিক প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, “গত ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে, আজ থেকে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু।

    এ পর্যায়ে আমাদের মূল দায়িত্ব হলো নির্বাচন আয়োজন।” তিনি আরও বলেন, “গতকাল নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে, রমজানের আগেই, নির্বাচন আয়োজন করতে।” প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, এখন থেকে সরকারের পূর্ণ মনোযোগ নির্বাচন আয়োজনের দিকেই থাকবে।

    নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখ ঘোষণা করবে বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, “নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে শুধু একটি সময়সীমা দেওয়া হয়েছে।” সংস্কার ও ট্রায়াল—এই দুই বিষয়কেও অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, “নির্বাচন ছাড়াও সংস্কার ও বিচারিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচন।”

    নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে এসপি ও ওসিদের লটারির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। ডিসি নিয়োগ নিয়ে আলোচনা চলমান আছে এবং খুব শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
    নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা প্রস্তুতির বিষয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। প্রেস সচিব জানান, “গত এক মাসে প্রধান উপদেষ্টা দুইবার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

    আনসার, পুলিশ এবং সেনাবাহিনী নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। আগের প্রস্তাবনায় ছিল ৮ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হবে, এখন দেখা হচ্ছে আরও ৫০ হাজার বাড়ানো সম্ভব কিনা।” তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শুরুতে ৬০ হাজার সদস্যের কথা বলা হয়েছিল, এখন চিন্তা করা হচ্ছে সংখ্যা আরও বাড়ানোর।”

    আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা—এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যতদিন না পর্যন্ত তাদের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান ট্রায়াল শেষ হচ্ছে, ততদিন তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও আলোচনা চলছে।”

    রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে কি না—এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন ঘোষণাকে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। তাদের সঙ্গে আগেও আলোচনা হয়েছে, সামনে আরও আলোচনা চলবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে খুব ভালো একটি নির্বাচন হবে।”

    লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত হবে কিনা—এই বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আগামি ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে, তা হবে ফ্রি, ফেয়ার এবং উৎসবমুখর। মানুষ আনন্দের সঙ্গে ভোট দেবে। এতে কোনো পক্ষই অভিযোগ তোলার সুযোগ পাবে না।”

    প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের পক্ষ থেকে বারবার জোর দিয়ে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনকে ঘিরেই এখন পুরো সরকারের মনোযোগ। নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক এবং নিরপেক্ষ হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।