ঢাকা ০৪:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    আগামী সরকারের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের জন্য ২৮০টি গাড়ি কেনার অনুমোদন

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০২:২৫:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
    • / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে

    আগামী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের গাড়ির ক্রয়মূল্য ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এছাড়া আগামী নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের জন্য ১৯১টি পাজেরোসহ মোট ২২০টি গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কেনার জন্য সরকারের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৪৪৫ কোটি টাকা।

    সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ২১ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্বাচনী কর্মকর্তা ও ভবিষ্যত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় এসব গাড়ি ক্রয় করা হবে।

    গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তে চলতি বছরের ৮ জুলাই জারি হওয়া সরকারি পরিপত্র উপেক্ষিত হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছিল, পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। তবে পরিচালন বাজেটের আওতায় সরকারি কর্মকর্তা ব্যবহৃত গাড়ি ১০ বছরের বেশি পুরনো হলে অর্থ বিভাগের অনুমতি নিয়ে নতুন গাড়ি কেনা যাবে। কিন্তু মন্ত্রীদের জন্য কেনা গাড়িগুলি মাত্র ৯ বছরের পুরনো হওয়ায় এই শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।

    এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পরবর্তী সরকার বা মন্ত্রীরা কী গাড়ি ব্যবহার করবে, তা কেন অন্তর্বর্তী সরকার নির্ধারণ করছে? এটি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়। এই সিদ্ধান্ত ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি উপেক্ষা করছে এবং অনতিবিলম্বে বাতিল করা উচিত।”

    অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আগামী মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য গাড়ি কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

    একই সঙ্গে নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রতিস্থাপক হিসেবে ১৯৫টি মিতসুবিশি পাজেরো এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য ২৫টি মাইক্রোবাস কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতিটি জিপের দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং প্রতিটি মাইক্রোবাসের দাম ৫২ লাখ টাকা। এই ২২০টি গাড়ি কেনার জন্য সরকারের খরচ হবে ৩৪৩ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

    চলতি অর্থবছরের বাজেটে যানবাহন অধিদপ্তরের মোটরযান ক্রয় খাতে ৩২৮ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে এই ২৮০টি গাড়ি ক্রয়ের ফলে ব্যয় হবে ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অর্থ বিভাগ অতিরিক্ত ৯৬ কোটি ৫১ লাখ ৫ হাজার টাকা অন্য খাতের অর্থ ব্যয়েরও অনুমোদন দিয়েছে।

    এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কেন অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতের মন্ত্রিসভার জন্য গাড়ি কিনছে এবং আগামী মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ৬০ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বৈধভাবে নির্ধারণের প্রশ্ন তৈরি করেছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    আগামী সরকারের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের জন্য ২৮০টি গাড়ি কেনার অনুমোদন

    আপডেট সময় ০২:২৫:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    আগামী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের গাড়ির ক্রয়মূল্য ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এছাড়া আগামী নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের জন্য ১৯১টি পাজেরোসহ মোট ২২০টি গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কেনার জন্য সরকারের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৪৪৫ কোটি টাকা।

    সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ২১ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্বাচনী কর্মকর্তা ও ভবিষ্যত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় এসব গাড়ি ক্রয় করা হবে।

    গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তে চলতি বছরের ৮ জুলাই জারি হওয়া সরকারি পরিপত্র উপেক্ষিত হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছিল, পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। তবে পরিচালন বাজেটের আওতায় সরকারি কর্মকর্তা ব্যবহৃত গাড়ি ১০ বছরের বেশি পুরনো হলে অর্থ বিভাগের অনুমতি নিয়ে নতুন গাড়ি কেনা যাবে। কিন্তু মন্ত্রীদের জন্য কেনা গাড়িগুলি মাত্র ৯ বছরের পুরনো হওয়ায় এই শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।

    এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পরবর্তী সরকার বা মন্ত্রীরা কী গাড়ি ব্যবহার করবে, তা কেন অন্তর্বর্তী সরকার নির্ধারণ করছে? এটি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়। এই সিদ্ধান্ত ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি উপেক্ষা করছে এবং অনতিবিলম্বে বাতিল করা উচিত।”

    অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আগামী মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য গাড়ি কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

    একই সঙ্গে নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রতিস্থাপক হিসেবে ১৯৫টি মিতসুবিশি পাজেরো এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য ২৫টি মাইক্রোবাস কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতিটি জিপের দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং প্রতিটি মাইক্রোবাসের দাম ৫২ লাখ টাকা। এই ২২০টি গাড়ি কেনার জন্য সরকারের খরচ হবে ৩৪৩ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

    চলতি অর্থবছরের বাজেটে যানবাহন অধিদপ্তরের মোটরযান ক্রয় খাতে ৩২৮ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে এই ২৮০টি গাড়ি ক্রয়ের ফলে ব্যয় হবে ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অর্থ বিভাগ অতিরিক্ত ৯৬ কোটি ৫১ লাখ ৫ হাজার টাকা অন্য খাতের অর্থ ব্যয়েরও অনুমোদন দিয়েছে।

    এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কেন অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতের মন্ত্রিসভার জন্য গাড়ি কিনছে এবং আগামী মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ৬০ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বৈধভাবে নির্ধারণের প্রশ্ন তৈরি করেছে।