আজ বিশ্ব বাঘ দিবস : পাচার, খাদ্যসংকট ও দূষণে বিপন্ন সুন্দরবনের বাঘ

- আপডেট সময় ১১:৫৯:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে
সুন্দরবনের বাঘ সংখ্যা সামান্য বাড়লেও, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে হুমকি বেড়েছে বহুগুণ। বাঘ শিকার, খাদ্যসংকট, শিল্পদূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন—সব মিলিয়ে বাঘ এখন অস্তিত্ব সংকটে। বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে পরিবেশবিদ, গবেষক ও বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে এই চিত্র।
২০১৮ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি, ২০২৪ সালের ক্যামেরা ট্র্যাপ জরিপে তা বেড়ে হয়েছে ১২৫। সংখ্যাগত এই বৃদ্ধির আড়ালে রয়েছে মৃত্যুর উদ্বেগজনক হিসাব। বন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত আড়াই দশকে ৬২টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাচারকারীদের হাতে ২৬টি, গ্রামবাসীর হাতে ১৪টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১টি ও স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ২১টি।
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘বাঘ হত্যা কিছুটা কমেছে, কিন্তু হুমকি বেড়েছে বহুগুণ। নদীর লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব বাঘের জীবনযাত্রা কঠিন করে তুলেছে।’ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লবণাক্ত পানি পান করায় বাঘ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী জানান, শিল্পকারখানার বর্জ্য, জাহাজের আলো ও শব্দ, বিষ দিয়ে মাছ ধরাসহ মানবসৃষ্ট নানা দূষণে বাঘের জীবন হুমকিতে পড়েছে। পশুর নদ দিয়ে এসব দূষণ বনাঞ্চলে প্রবেশ করে খাদ্য ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন, ‘হরিণ শিকার বন্ধ না হওয়ায় বাঘের খাদ্যসংকট দেখা দিচ্ছে, এতে তারা সহজ শিকার খুঁজে মানুষ আক্রমণ করছে।’ তিনি আরো বলেন, “কথায় আমরা সচেতন, কিন্তু কার্যক্রমে দুর্বল। বাঘ না থাকলে সুন্দরবন থাকবে না, আর বন না থাকলে বাংলাদেশ ভয়াবহ সংকটে পড়বে।”
উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের সদস্যসচিব সাইফুল ইসলাম জানান, বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারকারী একটি আন্তর্জাতিক চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত ১৫৩ জন পাচারকারীর বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁর মতে, কোটি টাকা ব্যয়ে গণনার চেয়ে পাচারকারীদের নির্মূল করলেই বাঘ রক্ষা সম্ভব।
বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ‘বাঘ হত্যা ঠেকাতে তথ্যদাতাদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শুধু আইন প্রয়োগে কাজ হবে না, দরকার সচেতনতা ও সদিচ্ছা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বাঘ হচ্ছে সুন্দরবনের কিস্টোন প্রজাতি। তারা থাকলে বন থাকবে, বন থাকলে দেশ থাকবে। হরিণ শিকার বন্ধ না হলে বাঘ দুর্বল হবে, মানুষ-বাঘ সংঘর্ষ বাড়বে। তাই এখনই প্রয়োজন জাতিগত সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগ।’
বিশ্ব বাঘ দিবসে ‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের সমৃদ্ধি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষা এখন আর কেবল একটি পরিবেশ ইস্যু নয়, এটি টিকে থাকার প্রশ্ন।