ঢাকা ১২:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

    একাত্তর ও গণতন্ত্র প্রশ্নে ছাড় দেওয়া হবে না-মির্জা ফখরুল

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৫:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
    • / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে

    একাত্তর ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই বক্তব্য দেন তিনি। গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, “১৯৭১ আমাদের মূল কথা, স্বাধীনতার যুদ্ধ আমাদের মূল কথা—এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও আমাদের কোনো ছাড় নেই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতন্ত্রই চাই।”

    মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “যতই দিন যাচ্ছে, ততই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, জনগণের অগ্রযাত্রাকে অস্বীকার করে, শোষণহীন সমাজের রাজনীতিকে মানে না—তারা আবার সংগঠিত হচ্ছে। মনে হচ্ছে ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলো ভেতরে ভেতরে চক্রান্তে লিপ্ত এবং ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।” তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে সহিংসতা, হত্যা ও অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

    আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, “আমরা যদি সামনে যে সুযোগ এসেছে তা হারিয়ে ফেলি, তবে বাংলাদেশ বহু বছর পিছিয়ে পড়বে। প্রতি বার অভ্যুত্থানের পর যদি আমরা দায়িত্বশীল আচরণ না করি, তাহলে সেটা দেশের জন্য ভয়াবহ হবে। এখন যারা গণতন্ত্রবিরোধী, তারা আবার সংঘটিত হচ্ছে। তাই সংস্কার, সনদ ও নির্বাচনের ভিত্তিতে যত দ্রুত এগোনো যায়, দেশের জন্য ততই মঙ্গল হবে। এই দায়িত্ব অবশ্যই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের।”

    সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে ঐকমত্যের ভিত্তি তৈরি করা জরুরি। তিনি বলেন, “যদি আমরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারি, তাহলে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর ও বিদেশি চক্রান্তকারীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আমরা সংস্কার ও বিচার চাই এবং এই সংস্কার সম্পন্ন করতে নির্বাচনের প্রয়োজন অপরিহার্য।”

    রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা যে পরিবর্তনের আশা করেছিলাম, তা হয়নি।” এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের আন্দোলনে যারা ছিলেন, তাদের ৯০ ভাগের নাম কেউ জানে না। রাজনৈতিক স্বার্থে অনেকেই সেই অবদানকে খাটো করছেন। শেখ হাসিনার পতন না হলে দেশের অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারত। এমনকি আবু সাঈদকে ‘জঙ্গি’ হিসেবে উপস্থাপন করা হত।”

    গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “প্রশাসনের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইউনূস ও উপদেষ্টাদের প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা তারা পূরণ করতে পারেননি। আমি যদি তাদের ১১ মাসের শাসনের ওপর মার্ক দিতে বলি, তবে ১০–এর মধ্যে ৪ দেব।”
    জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ছিল বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে জনগণের জন্য একটি নীতিনির্ভর নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা। কিন্তু এখনও তা হয়নি। বিগত দিনের গুম-খুনের বিচার কাঠামো এখনও দৃশ্যমান নয়।” তিনি নির্বাচন ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

    সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু। আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ১২–দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ কায়সার, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের আহ্বায়ক নাঈম জাহাঙ্গীর এবং নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত।

    আলোচনা সভাটি দেশব্যাপী একটি শক্তিশালী বার্তা দেয় যে, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আপস নয়, বরং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ের সমাজব্যবস্থা গঠনের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    একাত্তর ও গণতন্ত্র প্রশ্নে ছাড় দেওয়া হবে না-মির্জা ফখরুল

    আপডেট সময় ০৫:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

    একাত্তর ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই বক্তব্য দেন তিনি। গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, “১৯৭১ আমাদের মূল কথা, স্বাধীনতার যুদ্ধ আমাদের মূল কথা—এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও আমাদের কোনো ছাড় নেই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতন্ত্রই চাই।”

    মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “যতই দিন যাচ্ছে, ততই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, জনগণের অগ্রযাত্রাকে অস্বীকার করে, শোষণহীন সমাজের রাজনীতিকে মানে না—তারা আবার সংগঠিত হচ্ছে। মনে হচ্ছে ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলো ভেতরে ভেতরে চক্রান্তে লিপ্ত এবং ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।” তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে সহিংসতা, হত্যা ও অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

    আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, “আমরা যদি সামনে যে সুযোগ এসেছে তা হারিয়ে ফেলি, তবে বাংলাদেশ বহু বছর পিছিয়ে পড়বে। প্রতি বার অভ্যুত্থানের পর যদি আমরা দায়িত্বশীল আচরণ না করি, তাহলে সেটা দেশের জন্য ভয়াবহ হবে। এখন যারা গণতন্ত্রবিরোধী, তারা আবার সংঘটিত হচ্ছে। তাই সংস্কার, সনদ ও নির্বাচনের ভিত্তিতে যত দ্রুত এগোনো যায়, দেশের জন্য ততই মঙ্গল হবে। এই দায়িত্ব অবশ্যই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের।”

    সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে ঐকমত্যের ভিত্তি তৈরি করা জরুরি। তিনি বলেন, “যদি আমরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারি, তাহলে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর ও বিদেশি চক্রান্তকারীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আমরা সংস্কার ও বিচার চাই এবং এই সংস্কার সম্পন্ন করতে নির্বাচনের প্রয়োজন অপরিহার্য।”

    রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা যে পরিবর্তনের আশা করেছিলাম, তা হয়নি।” এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের আন্দোলনে যারা ছিলেন, তাদের ৯০ ভাগের নাম কেউ জানে না। রাজনৈতিক স্বার্থে অনেকেই সেই অবদানকে খাটো করছেন। শেখ হাসিনার পতন না হলে দেশের অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারত। এমনকি আবু সাঈদকে ‘জঙ্গি’ হিসেবে উপস্থাপন করা হত।”

    গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “প্রশাসনের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইউনূস ও উপদেষ্টাদের প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা তারা পূরণ করতে পারেননি। আমি যদি তাদের ১১ মাসের শাসনের ওপর মার্ক দিতে বলি, তবে ১০–এর মধ্যে ৪ দেব।”
    জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ছিল বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে জনগণের জন্য একটি নীতিনির্ভর নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা। কিন্তু এখনও তা হয়নি। বিগত দিনের গুম-খুনের বিচার কাঠামো এখনও দৃশ্যমান নয়।” তিনি নির্বাচন ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

    সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু। আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ১২–দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ কায়সার, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের আহ্বায়ক নাঈম জাহাঙ্গীর এবং নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত।

    আলোচনা সভাটি দেশব্যাপী একটি শক্তিশালী বার্তা দেয় যে, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আপস নয়, বরং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ের সমাজব্যবস্থা গঠনের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি।