গাজায় মার্কিন-ইসরায়েলি সংস্থার ত্রাণে মিলছে ‘ভয়াবহ’ মাদক

- আপডেট সময় ০৬:২৮:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
- / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহায়তায় পরিচালিত ত্রাণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) বিতরণ করা আটার ব্যাগে শক্তিশালী মাদক অক্সিকোডন বড়ি পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এই ঘটনাকে ‘জঘন্য অপরাধ’ আখ্যা দিয়েছে ও এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জাতিকে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এক বিবৃতিতে গাজা কর্তৃপক্ষ বলে, আমরা এখন পর্যন্ত অন্তত চারজন নাগরিকের সাক্ষ্য রেকর্ড করেছি, যারা বিতরণকৃত আটার বস্তায় এই বড়িগুলো খুঁজে পেয়েছেন। তারা সতর্ক করে বলেন, সম্ভাবনা আছে যে এই মাদকদ্রব্যগুলো আটার মধ্যে গুঁড়ো বা দ্রবীভূত করে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কী এই অক্সিকোডন?
অক্সিকোডন একটি শক্তিশালী ওপিওয়েড ওষুধ, যা সাধারণত ক্যানসারের মতো দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি অত্যন্ত নেশার প্রবণতা সৃষ্টি করে ও অনিয়ন্ত্রিত সেবনে শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা, বিভ্রম ও এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর, যেখানে দেখা যায় আটার ব্যাগের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে ছোট ছোট সাদা বড়ি।
গাজার ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড জাতিগত নিধনের সবচেয়ে নিকৃষ্ট রূপ। তিনি মনে করেন, এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কৌশল, যার লক্ষ্য ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করে দেওয়া।
ফিলিস্তিনি চিকিৎসক খালিল মাজেন আবু নাদা ফেসবুকে লিখেছেন, এই মাদক আমাদের সামাজিক চেতনা ধ্বংসের হাতিয়ার। তিনি এই ঘটনাকে একটি সুপরিকল্পিত মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে অভিহিত করেন।
গাজার মিডিয়া অফিস এই ঘটনায় ইসরায়েলকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করছে। তাদের দাবি, ইসরায়েল অবরোধের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এইসব পদার্থকে সাহায্যের আড়ালে গাজায় পাঠাচ্ছে।
এদিকে, এই অভিযোগ ঘিরে আবারও বিতর্কে পড়েছে জিএইচএফ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই বিতরণ সংস্থা গাজায় খাদ্য সহায়তা সরবরাহ করছে। সংস্থাটির বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে।
মাত্র কয়েক দিন আগেই ১৫টি মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে জিএইচএফের কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানায়। তারা সংস্থাটিকে ‘আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে অকার্যকর করে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার কাজে সহায়তা করার অভিযোগ তোলে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ, মানববিরোধী অপরাধ বা জাতিগত নিধনের পর্যায়ে পড়ে বলেও উল্লেখ করা হয়।
আরও ভয়াবহ বিষয় হলো, জিএইচএফ পরিচালিত সহায়তা পয়েন্টগুলোতে গত এক মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫১৬ ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানায়, সেখানে দায়িত্বরত সেনারা নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেছেন।