জাতীয় সরকার নিয়ে মির্জা ফখরুলের দাবি “ভুল ও বিভ্রান্তিকর” নাহিদ ইসলাম

- আপডেট সময় ০২:৪৯:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
- / ২৬৫ বার পড়া হয়েছে
জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রস্তাবে সম্মতি দেননি বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি এসব কথা জানান।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ৫ আগস্ট রাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং এর কিছুক্ষণ পরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সে বৈঠকে জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে, তারেক রহমান তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ছাত্র আন্দোলনকারীদের পরিবর্তে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পরামর্শ দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামও উঠে আসে প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাব হিসেবে।
তিনি আরও দাবি করেন, ৭ আগস্ট ভোরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় সরাসরি সাক্ষাতে অন্তর্বর্তী সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় উপদেষ্টা পরিষদের সম্ভাব্য সদস্যদের নাম নিয়ে পর্যালোচনা করা হয় এবং একই বিষয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দ্বিতীয়বার একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, ছাত্রশিবির নেতা সাদিক কায়েম এক টকশোতে দাবি করেছেন, ছাত্রশক্তি গঠনে শিবিরের ভূমিকা ছিল এবং তারা শিবিরের নির্দেশেই কাজ করতেন। এনসিপি আহ্বায়ক এই দাবিকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ছাত্রশক্তি গঠিত হয়েছিল ঢাবির “গুরুবার আড্ডা” পাঠচক্র, ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগকারী একটি অংশ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্টাডি সার্কেলকে কেন্দ্র করে। তাদের রাজনৈতিক কাজকর্ম ছিল দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফসল। শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, তবে রাজনৈতিক অংশীদারিত্ব বা নিয়ন্ত্রণ ছিল না বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।
তিনি জানান, সাদিক কায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সময় সমন্বয়ক ছিলেন না। কেবল ৫ আগস্টের ঘটনার পর শিবিরের ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে প্রেস ব্রিফিংয়ে বসার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ও তার ঘনিষ্ঠরা ভুলভাবে দাবি করেন যে এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব ছিল শিবিরের, বাকি সবাই কেবল দৃশ্যমান মুখ ছিল।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ২ আগস্ট রাতে জুলকারনাইন সায়েরের নেতৃত্বে সামরিক হস্তক্ষেপ ঘটিয়ে সেনাবাহিনীর এক অংশকে ক্ষমতা হস্তান্তর করার চেষ্টার অভিযোগ আছে। ওই সময় ‘সেইফ হাউজ’-এ অবস্থানরত ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে ফেসবুকে ‘সরকার পতনের একদফা’ ঘোষণা দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয় এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকিও দেওয়া হয়। তিনি জানান, আন্দোলনের অবস্থান ছিল স্পষ্ট—কোনোভাবেই সেনাবাহিনী বা সেনা-সমর্থিত কোনো গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। তা হলে তা হবে এক-এগারোর পুনরাবৃত্তি, যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনরাবির্ভাবের সুযোগ তৈরি হবে এবং দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আন্দোলনের সফলতার জন্য তা হতে হবে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থান, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময় থেকেই জুলকারনাইন সায়ের ও তার অনুসারীরা নেতৃত্ব পাল্টানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। সাদিক কায়েমদের ব্যবহার করে তারা বিভ্রান্তি তৈরি করছে, চালাচ্ছে কল রেকর্ড ফাঁস, নজরদারি, চরিত্র হনন ও অপপ্রচারের নানা কর্মকাণ্ড।
পোস্টের শেষ অংশে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে সিটিং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও যে ধরনের অপপ্রচার চলছে, তা এ দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, মিথ্যার ভিত্তির ওপর কিছুক্ষণ দাঁড়ানো গেলেও দীর্ঘ সময় তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যারা সত্য আড়াল করছে, তাদেরও পতন অবশ্যম্ভাবী।