ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশনা প্রশংসনীয় : বিএনপি মহাসচিব

- আপডেট সময় ০৬:০৬:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের যে নির্দেশনা এসেছে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিইউজে ও বিএফইউজে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভোটাধিকার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেছে। তাই এখন নির্বাচন নিয়ে আর কোনো জটিলতা থাকার কথা নয়। তিনি জানান, বিএনপি জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে খাটো করে দেখতে চায় না। বরং এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে যথাযথ মূল্যায়ন করেই দলটি “জুলাই সনদের” সুপারিশপত্র বুধবার রাতে সরকারের কাছে জমা দিয়েছে।
আলোচনাসভা শেষে তিনি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সাংবাদিকদের ওপর চালানো নির্যাতনের চিত্র নিয়ে আয়োজিত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। সেখানে তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে এবং সব ধরনের গণতান্ত্রিক সংস্কারকে স্বাগত জানায়। কিন্তু যদি কেউ বলে বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, তা হলে সেটা ভুল ব্যাখ্যা হবে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, গত ১৭ বছরে বিএনপির প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে এবং ২০ হাজার নেতাকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। এসব বাস্তবতা উপেক্ষা করে কেউ যদি গণতন্ত্রের কথা বলেন, তা হলে সেটি আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সামনে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
সীমান্ত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা ও পুশ-ইন চলছে, যা কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের উচিত ভারতের সঙ্গে এই বিষয়ে জোরালো ও দৃঢ় আলোচনা করা। একই সঙ্গে ন্যায্য পানির প্রাপ্তি নিয়েও আন্তরিকভাবে আলোচনা চালানো প্রয়োজন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটি বাংলাদেশের পোশাক খাতকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক সংকট ডেকে আনবে। তাই সরকারের উচিত বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করা।
গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এখন বিভক্তি নয় বরং জাতিগত ঐক্য সবচেয়ে জরুরি। একটি অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার এটাই সঠিক সময়।
আলোচনাসভায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রাজনৈতিক দল, জনগণ এবং গণমাধ্যম—এই তিন শক্তির মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। রাষ্ট্র বিনির্মাণে বিভেদ নয়, ঐক্য দরকার। তিনি বলেন, জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু বিভাজন এবং আক্রোশ যেন না হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, স্বৈরতন্ত্রের রেশ এখনো সমাজে রয়ে গেছে। তরুণ নেতৃত্বের কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে বিরুদ্ধ মত পোষণকারী সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছেন, যা কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে, এই বিজয় ধরে রাখতে হলে ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রয়োজন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার। তিনি জুলাই বিপ্লবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা নির্যাতিত হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, মামলার শিকার হয়েছেন তাদের স্মরণ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি নিজের লেখা কবিতা ‘জুলাই বাংলাদেশ’ পাঠ করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহ-সভাপতি একেএম মহসিন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান।