সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে ওরকার আক্রমণে প্রাণী প্রশিক্ষক জেসিকা র‌্যাডক্লিফ নিহত হয়েছেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এটি একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট খবর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি করা একাধিক ভিডিও ব্যবহার করে এই গুজব ছড়ানো হয়েছে।

ভাইরাল ভিডিওর পেছনের সত্যতা
ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে দাবি করা হয়, ২০২৫ সালে একটি শোর আগে প্রশিক্ষণ চলাকালে ওরকা কাইরো হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে জেসিকাকে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই নামে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো সামুদ্রিক প্রাণী প্রশিক্ষকের ওরকার আক্রমণে নিহত হওয়ার খবর কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।

অনুসন্ধানের শুরুতে ‘FactEX’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি জেসিকার মৃত্যুর দাবি করা হয়। ভিডিওতে বলা হয়, জেসিকা ‘ওশান হ্যাভেন’ নামের একটি মেরিন পার্কে প্রথমবারের মতো ওরকা শো-তে অংশ নেন। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেই এই পার্কের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। একই ধরনের দাবি গত ১১ এপ্রিল ‘Animal Quests’ নামের ইউটিউব চ্যানেলেও প্রকাশিত হয়, যেখানে ভিডিওর বর্ণনায় জেসিকাকে একজন কাল্পনিক প্রশিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এআই-নির্মিত ভিডিওর ব্যবহার
‘Mahmuda Champa’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে চারটি ভিন্ন ভিডিও প্রচার করা হয়, যেখানে জেসিকার নিহত হওয়ার দৃশ্য দাবি করা হয়েছে। সবগুলো ভিডিওই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। একই ধরনের আরেকটি ভিডিও ‘Bd Tube Master’ নামের ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়, যেখানে একজন নারীর সঙ্গে দুটি ডলফিনের দৃশ্য দেখা যায়। এআই শনাক্তকরণ টুল হাইভ মোডারেশনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও এই ঘটনাকে মিথ্যা বলে নিশ্চিত করেছে।

প্রকৃত ঘটনা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
তবে, ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সি-ওয়ার্ল্ড অরল্যান্ডোর ৪০ বছর বয়সী সিনিয়র প্রশিক্ষক ডন ব্রানশো একটি শো শেষে ‘টিলিকাম’ নামের ওরকার আক্রমণে নিহত হয়েছিলেন। জেসিকা র‌্যাডক্লিফের নামে প্রচারিত খবরটি এই প্রকৃত ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুতরাং, প্রাণী প্রশিক্ষক জেসিকা র‌্যাডক্লিফের ডলফিনের আক্রমণে নিহত হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এটি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা ভিডিওর মাধ্যমে ছড়ানো একটি গুজব।