ঢাকা ০৫:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

    বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দল লিড নিয়েও কোরিয়ার কাছে বড় হার

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৬:২৪:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৫২ বার পড়া হয়েছে

    এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বে এক সময় এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতে লিড নেওয়ার পর প্রথমার্ধে ১-১ সমতায় গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে খেই হারায় আফিদারা। শেষ পর্যন্ত ১-৬ গোলের বড় ব্যবধানে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের

    ৩২ দলের এই আসরে আটটি গ্রুপে ভাগ হয়ে লড়ছে দলগুলো। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং সেরা তিন রানার্স আপ আগামী বছর থাইল্যান্ডে মূল পর্বে খেলবে। বাংলাদেশ আজ কোরিয়ার বিপক্ষে ড্র করলে ‘এইচ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সরাসরি মূল পর্বে জায়গা পেত। কিন্তু ৫ গোলের ব্যবধানে হারের ফলে এখন তাদের আশা নির্ভর করছে অন্য ম্যাচগুলোর ফলাফলের উপর। তিন ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট, গোল ব্যবধান +৫—যা সেরা তিন রানার্স আপের মধ্যে থাকতে যথেষ্ট নাও হতে পারে।

    দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য দারুণ। ম্যাচ শুরুর প্রথম আক্রমণেই গোলের সুযোগ তৈরি করে ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সাগরিকা। যদিও কোরিয়ান গোলরক্ষক এগিয়ে এসে সেটি রুখে দেন, কিন্তু ১৫ মিনিটেই গোল পেয়ে যায় লাল-সবুজরা। কাউন্টার অ্যাটাকে সাগরিকা ও শান্তি মারডি নিজেদের মধ্যে বল আদান-প্রদান করে বক্সে ঢুকে পড়েন। শান্তির বাড়ানো বল কোরিয়ান গোলরক্ষকের হাত ফসকে সামনে এগিয়ে যায়, আর ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমতী তৃষ্ণা রাণী টোকা দিয়ে জালে পাঠান। গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা তখন উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। বয়সভিত্তিক হলেও কোরিয়ার জালে গোল ছিল বাংলাদেশের জন্য এক বড় আনন্দের মুহূর্ত।

    তবে লিড বেশিক্ষণ টিকেনি। মাত্র তিন মিনিট পরেই কোরিয়া ম্যাচে সমতা ফেরায়। পিটার বাটলারের হাই লাইন ডিফেন্স তত্ত্ব কোরিয়ার লং বলের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। দ্রুতগতির কোরিয়ান ফরোয়ার্ডরা ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে গোলরক্ষক স্বর্ণাকে একা পেয়ে সমতাসূচক গোলটি করেন। এরপর কোরিয়া আক্রমণের চাপ বাড়িয়ে দেয়, তবে প্রথমার্ধে গোলরক্ষক স্বর্ণা রাণীর দৃঢ়তা ও কয়েকটি গোল মিস করার কারণে স্কোরলাইন ১-১-এই থাকে। ইনজুরি সময়ে স্বর্ণা পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে এক গুরুত্বপূর্ণ সেভ করে দলকে বাঁচান।

    প্রথমার্ধে বাংলাদেশ দুর্দান্ত লড়াই করলেও দ্বিতীয়ার্ধে সম্পূর্ণ চিত্র বদলে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কোরিয়া গোল করে এগিয়ে যায়, আর সেখান থেকেই ম্যাচ বাংলাদেশের হাতছাড়া হতে শুরু করে। ৬১ মিনিটে আরেকটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে কোরিয়ান অধিনায়ক চো হেং গোল করে ব্যবধান বাড়ান। বাটলারের করা ডাবল পরিবর্তনও ম্যাচে ফেরার কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।

    ৮৪ মিনিটে বাংলাদেশের ডিফেন্ডারের ফাউলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। কোরিয়ান অধিনায়ক পেনাল্টি থেকে স্কোরলাইন ৪-০ করেন। শেষ দশ মিনিটে আরও দুটি গোল হজম করে বাংলাদেশ, যা স্কোরলাইন দাঁড় করায় ৬-১-এ।
    ম্যাচের পরিসংখ্যান বলছে, দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় পুরো সময় খেলা হয়েছে বাংলাদেশের অর্ধে। প্রথমার্ধে যেভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ খেলে কোরিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল আফিদারা, দ্বিতীয়ার্ধে সেই ধার আর বজায় রাখতে পারেনি তারা। পিটার বাটলারের হাই লাইন ডিফেন্স কৌশল শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ—কোরিয়া সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

    লাওসের ভিয়েনতিয়েনে অনুষ্ঠিত ম্যাচে শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত যেন কেবল সময় গুনছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। দিনশেষে লিড নেওয়ার স্বপ্ন ও জয় পাওয়ার আশা ভেঙে যায় বড় হারের বেদনাতে, আর থাইল্যান্ডের মূল পর্বে খেলার ভাগ্য ঝুলে যায় অন্য ম্যাচের ফলাফলের উপর।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দল লিড নিয়েও কোরিয়ার কাছে বড় হার

    আপডেট সময় ০৬:২৪:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

    এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বে এক সময় এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতে লিড নেওয়ার পর প্রথমার্ধে ১-১ সমতায় গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে খেই হারায় আফিদারা। শেষ পর্যন্ত ১-৬ গোলের বড় ব্যবধানে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের

    ৩২ দলের এই আসরে আটটি গ্রুপে ভাগ হয়ে লড়ছে দলগুলো। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং সেরা তিন রানার্স আপ আগামী বছর থাইল্যান্ডে মূল পর্বে খেলবে। বাংলাদেশ আজ কোরিয়ার বিপক্ষে ড্র করলে ‘এইচ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সরাসরি মূল পর্বে জায়গা পেত। কিন্তু ৫ গোলের ব্যবধানে হারের ফলে এখন তাদের আশা নির্ভর করছে অন্য ম্যাচগুলোর ফলাফলের উপর। তিন ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট, গোল ব্যবধান +৫—যা সেরা তিন রানার্স আপের মধ্যে থাকতে যথেষ্ট নাও হতে পারে।

    দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য দারুণ। ম্যাচ শুরুর প্রথম আক্রমণেই গোলের সুযোগ তৈরি করে ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সাগরিকা। যদিও কোরিয়ান গোলরক্ষক এগিয়ে এসে সেটি রুখে দেন, কিন্তু ১৫ মিনিটেই গোল পেয়ে যায় লাল-সবুজরা। কাউন্টার অ্যাটাকে সাগরিকা ও শান্তি মারডি নিজেদের মধ্যে বল আদান-প্রদান করে বক্সে ঢুকে পড়েন। শান্তির বাড়ানো বল কোরিয়ান গোলরক্ষকের হাত ফসকে সামনে এগিয়ে যায়, আর ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমতী তৃষ্ণা রাণী টোকা দিয়ে জালে পাঠান। গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা তখন উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। বয়সভিত্তিক হলেও কোরিয়ার জালে গোল ছিল বাংলাদেশের জন্য এক বড় আনন্দের মুহূর্ত।

    তবে লিড বেশিক্ষণ টিকেনি। মাত্র তিন মিনিট পরেই কোরিয়া ম্যাচে সমতা ফেরায়। পিটার বাটলারের হাই লাইন ডিফেন্স তত্ত্ব কোরিয়ার লং বলের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। দ্রুতগতির কোরিয়ান ফরোয়ার্ডরা ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে গোলরক্ষক স্বর্ণাকে একা পেয়ে সমতাসূচক গোলটি করেন। এরপর কোরিয়া আক্রমণের চাপ বাড়িয়ে দেয়, তবে প্রথমার্ধে গোলরক্ষক স্বর্ণা রাণীর দৃঢ়তা ও কয়েকটি গোল মিস করার কারণে স্কোরলাইন ১-১-এই থাকে। ইনজুরি সময়ে স্বর্ণা পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে এক গুরুত্বপূর্ণ সেভ করে দলকে বাঁচান।

    প্রথমার্ধে বাংলাদেশ দুর্দান্ত লড়াই করলেও দ্বিতীয়ার্ধে সম্পূর্ণ চিত্র বদলে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কোরিয়া গোল করে এগিয়ে যায়, আর সেখান থেকেই ম্যাচ বাংলাদেশের হাতছাড়া হতে শুরু করে। ৬১ মিনিটে আরেকটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে কোরিয়ান অধিনায়ক চো হেং গোল করে ব্যবধান বাড়ান। বাটলারের করা ডাবল পরিবর্তনও ম্যাচে ফেরার কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।

    ৮৪ মিনিটে বাংলাদেশের ডিফেন্ডারের ফাউলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। কোরিয়ান অধিনায়ক পেনাল্টি থেকে স্কোরলাইন ৪-০ করেন। শেষ দশ মিনিটে আরও দুটি গোল হজম করে বাংলাদেশ, যা স্কোরলাইন দাঁড় করায় ৬-১-এ।
    ম্যাচের পরিসংখ্যান বলছে, দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় পুরো সময় খেলা হয়েছে বাংলাদেশের অর্ধে। প্রথমার্ধে যেভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ খেলে কোরিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল আফিদারা, দ্বিতীয়ার্ধে সেই ধার আর বজায় রাখতে পারেনি তারা। পিটার বাটলারের হাই লাইন ডিফেন্স কৌশল শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ—কোরিয়া সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

    লাওসের ভিয়েনতিয়েনে অনুষ্ঠিত ম্যাচে শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত যেন কেবল সময় গুনছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। দিনশেষে লিড নেওয়ার স্বপ্ন ও জয় পাওয়ার আশা ভেঙে যায় বড় হারের বেদনাতে, আর থাইল্যান্ডের মূল পর্বে খেলার ভাগ্য ঝুলে যায় অন্য ম্যাচের ফলাফলের উপর।