ঢাকা ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী আজ

    বাঙালির চেতনা ও সংস্কৃতির মহীরুহে শ্রদ্ধার্ঘ্য

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০১:০৫:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
    • / ৩৩৪ বার পড়া হয়েছে

    “রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন… ব্যক্ত হোক জীবনের জয়”—চিরন্তন এই বাণীর মধ্য দিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী পালন করছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। আজ ২৫ বৈশাখ, বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনায় অম্লান এই দিনটি উদ্যাপিত হচ্ছে নানা অনুষ্ঠানমালায়, গান-কবিতা আর আবেগের মধ্য দিয়ে।

    বিশ্বজুড়ে রবীন্দ্রনাথ :
    ১৮৬১ সালের ৭ মে (১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্ম নেওয়া রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলা সাহিত্য নয়, বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাঙালির মেধা-প্রতিভা। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে তিনি এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তার সৃষ্টিকর্ম আজও প্রাসঙ্গিক—কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক, দর্শন থেকে শুরু করে শিক্ষা ও সমাজসংস্কারে তার ভাবনা এখনও পথ দেখায়।

    বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীতের রূপকার :
    রবীন্দ্রনাথের লেখা “আমার সোনার বাংলা” বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত, আর “জনগণমন-অধিনায়ক” ভারতের জাতীয় সংগীত। দুই দেশের জাতীয়তাবাদী চেতনায় তার অবদান অনন্য। এছাড়া তিনি রচনা করেছেন দুই হাজারেরও বেশি গান, যা রবীন্দ্রসংগীত হিসেবে বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

    সমাজসংস্কার থেকে শিক্ষাক্রম:
    রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। নোবেল পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃষি ব্যাংক, দরিদ্র কৃষকদের সহায়তার লক্ষ্যে। শান্তিনিকেতনে গড়ে তোলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, যা প্রকৃতি ও মানবতার সমন্বয়ে শিক্ষার আদর্শ কেন্দ্র। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদও ছিল সোচ্চার—জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ত্যাগ করেছিলেন ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত ‘নাইটহুড’ উপাধি।

    রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মে মিলেছে ভাবগাম্ভীর্য, প্রকৃতিপ্রেম, মানবতা ও আধ্যাত্মিকতার সমন্বয়। তার গদ্য ও পদ্য উভয়ই বাংলা ভাষাকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। তিনি শুধু কবি নন, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, সমাজচিন্তক এবং দার্শনিকও বটে।

     শেষজীবন ও উত্তরাধিকার:
    ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন এই মহান কবি। তবে তার সৃষ্টি আজও প্রাণবন্ত—বাংলার ঘরে ঘরে, স্কুল-কলেজে, সাংস্কৃতিক আয়োজনে রবীন্দ্রনাথের গান-কবিতা-দর্শন এখনও অনুপ্রেরণার উৎস।

    আজকের দিনের তাৎপর্য:
    রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা সভা, গান, নৃত্যনাট্য ও কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হচ্ছে এই মহামানবকে।

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একটি নাম নয়, তিনি বাঙালির চিরন্তন প্রেরণা—যার আলোয় আজও উদ্ভাসিত আমাদের সংস্কৃতি ও মনন।

     

    নিউজটি শেয়ার করুন

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী আজ

    বাঙালির চেতনা ও সংস্কৃতির মহীরুহে শ্রদ্ধার্ঘ্য

    আপডেট সময় ০১:০৫:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

    “রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন… ব্যক্ত হোক জীবনের জয়”—চিরন্তন এই বাণীর মধ্য দিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী পালন করছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। আজ ২৫ বৈশাখ, বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনায় অম্লান এই দিনটি উদ্যাপিত হচ্ছে নানা অনুষ্ঠানমালায়, গান-কবিতা আর আবেগের মধ্য দিয়ে।

    বিশ্বজুড়ে রবীন্দ্রনাথ :
    ১৮৬১ সালের ৭ মে (১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্ম নেওয়া রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলা সাহিত্য নয়, বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাঙালির মেধা-প্রতিভা। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে তিনি এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তার সৃষ্টিকর্ম আজও প্রাসঙ্গিক—কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক, দর্শন থেকে শুরু করে শিক্ষা ও সমাজসংস্কারে তার ভাবনা এখনও পথ দেখায়।

    বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীতের রূপকার :
    রবীন্দ্রনাথের লেখা “আমার সোনার বাংলা” বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত, আর “জনগণমন-অধিনায়ক” ভারতের জাতীয় সংগীত। দুই দেশের জাতীয়তাবাদী চেতনায় তার অবদান অনন্য। এছাড়া তিনি রচনা করেছেন দুই হাজারেরও বেশি গান, যা রবীন্দ্রসংগীত হিসেবে বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

    সমাজসংস্কার থেকে শিক্ষাক্রম:
    রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। নোবেল পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃষি ব্যাংক, দরিদ্র কৃষকদের সহায়তার লক্ষ্যে। শান্তিনিকেতনে গড়ে তোলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, যা প্রকৃতি ও মানবতার সমন্বয়ে শিক্ষার আদর্শ কেন্দ্র। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদও ছিল সোচ্চার—জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ত্যাগ করেছিলেন ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত ‘নাইটহুড’ উপাধি।

    রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মে মিলেছে ভাবগাম্ভীর্য, প্রকৃতিপ্রেম, মানবতা ও আধ্যাত্মিকতার সমন্বয়। তার গদ্য ও পদ্য উভয়ই বাংলা ভাষাকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। তিনি শুধু কবি নন, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, সমাজচিন্তক এবং দার্শনিকও বটে।

     শেষজীবন ও উত্তরাধিকার:
    ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন এই মহান কবি। তবে তার সৃষ্টি আজও প্রাণবন্ত—বাংলার ঘরে ঘরে, স্কুল-কলেজে, সাংস্কৃতিক আয়োজনে রবীন্দ্রনাথের গান-কবিতা-দর্শন এখনও অনুপ্রেরণার উৎস।

    আজকের দিনের তাৎপর্য:
    রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা সভা, গান, নৃত্যনাট্য ও কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হচ্ছে এই মহামানবকে।

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একটি নাম নয়, তিনি বাঙালির চিরন্তন প্রেরণা—যার আলোয় আজও উদ্ভাসিত আমাদের সংস্কৃতি ও মনন।