ঢাকা ০৬:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত ১৪শ, আহত তিন হাজারের বেশি

    ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
    • আপডেট সময় ০৬:৫৭:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
    • / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে

    আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত এক হাজার ৪০০ জন নিহত ও তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তালেবান সরকার। এটি কয়েক দশকের মধ্যে দেশটিতে আঘাত হানা সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পগুলোর একটি।

    ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি রবিবার গভীর রাতে পাকিস্তান সীমান্তের কাছে দুর্গম পাহাড়ি প্রদেশগুলোতে আঘাত হানে। এরপর থেকে হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ মঙ্গলবার এক্সে জানান, শুধু কুনার প্রদেশেই এক হাজার ৪১১ জন নিহত ও তিন হাজার ১২৪ জন আহত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী নানগারহার প্রদেশেও অন্তত এক ডজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।

    জাতিসংঘের আফগানিস্তানবিষয়ক মানবিক সমন্বয়কারী ইন্দ্রিকা রাতওয়াত্তে সতর্ক করে বলেন, এই ভূমিকম্পে লাখো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। ইতিমধ্যে কুনারে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান এহসানুল্লাহ এহসান জানিয়েছেন, সারারাত উদ্ধার কাজ চললেও দূরবর্তী গ্রামগুলোতে এখনো অনেক আহত মানুষ চিকিৎসার অপেক্ষায় আছেন।

    গ্রামবাসীরা খালি হাতে ভেঙে পড়া ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে প্রিয়জনদের খুঁজছেন। ওয়াদির গ্রামের ২৬ বছর বয়সী ওবায়দুল্লাহ স্তোমান বলেন, “আমি আমার বন্ধুকে খুঁজছি, কিন্তু এখনো পাইনি। চারদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ, দৃশ্যটা অসহনীয়।” নিহতদের মধ্যে বহু শিশু রয়েছে। তাদের দাফন সম্পন্ন হচ্ছে স্বজনদের কান্নার মাঝে।

    জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, অনেক সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল জালালাবাদ থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে এবং মাত্র আট কিলোমিটার ভূগভীরে। ইউএস জিওলোজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, অগভীর ভূমিকম্পে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা সাধারণত বেশি হয়, বিশেষত আফগানিস্তানে অধিকাংশ মানুষ কাঁচা ইটের ঘরে বসবাস করায় ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হয়েছে।

    যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান বিশ্বের দরিদ্রতম রাষ্ট্রগুলোর একটি। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিদেশি সহায়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতাকে আরও দুর্বল করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার এক বিবৃতিতে জানান, সংস্থাটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে জরুরি সহায়তা দিচ্ছে এবং প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে।

    আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হেরাত প্রদেশে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল এবং প্রায় ৬৩ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর আগে ২০২২ সালের জুনে পাকতিকা প্রদেশে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে এক হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। এবারের ভূমিকম্পটি আরও ভয়াবহ হয়ে দেখা দিয়েছে, কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান ও ইরান থেকে কয়েক মিলিয়ন আফগান ফিরে এসে ভেঙে পড়া দুর্গম গ্রামগুলোতে বসবাস শুরু করেছিলেন, যেগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত ১৪শ, আহত তিন হাজারের বেশি

    আপডেট সময় ০৬:৫৭:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত এক হাজার ৪০০ জন নিহত ও তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তালেবান সরকার। এটি কয়েক দশকের মধ্যে দেশটিতে আঘাত হানা সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পগুলোর একটি।

    ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি রবিবার গভীর রাতে পাকিস্তান সীমান্তের কাছে দুর্গম পাহাড়ি প্রদেশগুলোতে আঘাত হানে। এরপর থেকে হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ মঙ্গলবার এক্সে জানান, শুধু কুনার প্রদেশেই এক হাজার ৪১১ জন নিহত ও তিন হাজার ১২৪ জন আহত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী নানগারহার প্রদেশেও অন্তত এক ডজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।

    জাতিসংঘের আফগানিস্তানবিষয়ক মানবিক সমন্বয়কারী ইন্দ্রিকা রাতওয়াত্তে সতর্ক করে বলেন, এই ভূমিকম্পে লাখো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। ইতিমধ্যে কুনারে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান এহসানুল্লাহ এহসান জানিয়েছেন, সারারাত উদ্ধার কাজ চললেও দূরবর্তী গ্রামগুলোতে এখনো অনেক আহত মানুষ চিকিৎসার অপেক্ষায় আছেন।

    গ্রামবাসীরা খালি হাতে ভেঙে পড়া ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে প্রিয়জনদের খুঁজছেন। ওয়াদির গ্রামের ২৬ বছর বয়সী ওবায়দুল্লাহ স্তোমান বলেন, “আমি আমার বন্ধুকে খুঁজছি, কিন্তু এখনো পাইনি। চারদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ, দৃশ্যটা অসহনীয়।” নিহতদের মধ্যে বহু শিশু রয়েছে। তাদের দাফন সম্পন্ন হচ্ছে স্বজনদের কান্নার মাঝে।

    জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, অনেক সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল জালালাবাদ থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে এবং মাত্র আট কিলোমিটার ভূগভীরে। ইউএস জিওলোজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, অগভীর ভূমিকম্পে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা সাধারণত বেশি হয়, বিশেষত আফগানিস্তানে অধিকাংশ মানুষ কাঁচা ইটের ঘরে বসবাস করায় ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হয়েছে।

    যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান বিশ্বের দরিদ্রতম রাষ্ট্রগুলোর একটি। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিদেশি সহায়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতাকে আরও দুর্বল করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার এক বিবৃতিতে জানান, সংস্থাটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে জরুরি সহায়তা দিচ্ছে এবং প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে।

    আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হেরাত প্রদেশে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল এবং প্রায় ৬৩ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর আগে ২০২২ সালের জুনে পাকতিকা প্রদেশে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে এক হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। এবারের ভূমিকম্পটি আরও ভয়াবহ হয়ে দেখা দিয়েছে, কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান ও ইরান থেকে কয়েক মিলিয়ন আফগান ফিরে এসে ভেঙে পড়া দুর্গম গ্রামগুলোতে বসবাস শুরু করেছিলেন, যেগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।