যুদ্ধ নাকি শান্তি, পছন্দ করতে হবে বিশ্বকে- শি জিনপিংয়ের হুঁশিয়ারি

- আপডেট সময় ১২:১০:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে আয়োজিত সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজে বিশ্বকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এ কুচকাওয়াজে তিনি বলেন, মানবজাতি আজ শান্তি অথবা যুদ্ধ, সংলাপ অথবা সংঘর্ষ, জয় অথবা শূন্যতার মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। শি জিনপিং দাবি করেন, চীন ইতিহাসের সঠিক পাশে রয়েছে এবং সেখানেই দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছে।
বুধবার বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত এ মহাসামরিক কুচকাওয়াজে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। পশ্চিমা বিশ্ব এ আয়োজন এড়িয়ে গেলেও, ৫০ হাজার দর্শকের সামনে চীন তার সামরিক শক্তি ও কূটনৈতিক প্রভাব প্রদর্শন করে।
শি জিনপিং বক্তব্যের পর ছাদখোলা লিমোজিনে সেনাবাহিনী পরিদর্শন করেন। সেখানে প্রদর্শিত হয় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, পানির নিচের ড্রোন, লেজার অস্ত্র, নতুন আইসিবিএম এবং সশস্ত্র রোবট নেকড়ে ও রোবট কুকুরসহ অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম। ৭০ মিনিটব্যাপী প্রদর্শনীতে হেলিকপ্টারগুলো বিশাল ব্যানার বহন করে এবং যুদ্ধবিমান ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যায়। শান্তির প্রতীক হিসেবে আকাশে ওড়ানো হয় ৮০ হাজার পায়রা।
শি জিনপিং এদিন মাও সেতুংয়ের মতো টিউনিক স্যুট পরে লাল গালিচায় ২৫ জনেরও বেশি বিশ্বনেতাকে অভ্যর্থনা জানান। দর্শকসারিতে পুতিন ও কিম জং উনের মাঝখানে বসেন তিনি—যা এই তিন নেতার প্রথম জনসম্মুখে একসঙ্গে উপস্থিতি। পরে কিম জং উন চীনের রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সমর্থন ও সেনাদের লড়াইয়ের জন্য কিমকে ধন্যবাদ জানান।
কুচকাওয়াজ চলাকালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে শি জিনপিংকে উদ্দেশ করে লেখেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আগ্রাসনের হাত থেকে চীনকে স্বাধীনতা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছিল। পাশাপাশি তিনি পুতিন ও কিমকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।”
শি জিনপিং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ‘চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণের’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জাপানের আগ্রাসনের অপমান কাটিয়ে চীন বিশ্বশক্তি হয়ে উঠেছে। চলতি সপ্তাহেই তিনি এক আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্মেলনে আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যের আহ্বান জানান, যা যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করেই বলা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাইওয়ানভিত্তিক আটলান্টিক কাউন্সিলের গবেষক ওয়েন-টি সুং বলেন, শি এখন আত্মবিশ্বাসী যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বদলে গেছে এবং চীন আবারও চালকের আসনে ফিরে এসেছে। তাঁর মতে, বর্তমান আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার জন্য দুটি কারণ সামনে আসে—চীনের আগ্রাসী কূটনীতি ও ট্রাম্পের একতরফাবাদ।
পুতিন এ সফরে চীনের সঙ্গে নতুন জ্বালানি চুক্তি করেছেন। অন্যদিকে কিম জং উনের জন্য এ আয়োজন ছিল আন্তর্জাতিক মঞ্চে উপস্থিতি জানানোর সুযোগ, যেখানে তাঁর নিষিদ্ধ পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য তিনি পরোক্ষ সমর্থনও পেয়েছেন। উল্লেখ্য, ৬৬ বছর পর কোনো উত্তর কোরিয়ার নেতা চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিলেন।
বিবিসি বিশ্লেষণে বলা হয়, এ কুচকাওয়াজ কেবল সামরিক শক্তি প্রদর্শনী নয়, বরং নতুন এক বিশ্বব্যবস্থার ইঙ্গিতও দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চীন এখনো স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেটি পূরণ করতে প্রস্তুত তারা।