লন্ডনে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ভাইয়ের ২৬ কোটি টাকার অ্যাপার্টমেন্ট, তদন্তে বিদেশি সংস্থাও

- আপডেট সময় ০২:১৩:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
- / ২৬০ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের অভিজাত এজোয়ার রোড এলাকার কাছে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল আবাসিক ভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই ও ব্যবসায়ী আনিসুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানায় একটি আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। এজোয়ার রোড সংলগ্ন উত্তর লন্ডনের নিউক্যাসল প্লেসে অবস্থিত ‘ওয়েস্টমার্ক টাওয়ার’-এর ওই অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ১৬ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ ব্রিটিশ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার সমপরিমাণ।
এই টাওয়ারটি মূলত আরব দেশসমূহের ধনকুবেরদের অভিজাত বাসস্থান হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন ও কোম্পানি হাউসের দলিল অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৫ জুলাই ‘বিটকম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ নামে একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই সম্পত্তি কেনা হয়।
যুক্তরাজ্যের কোম্পানি হাউসে নিবন্ধিত তথ্য অনুযায়ী, বিটকম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড (কোম্পানি নম্বর: ১২৫৮২৪৬২) গঠিত হয় ২০২০ সালের ১ মে। এর দুই পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী ইমরানা জামান চৌধুরী—দুজনের জাতীয়তা বাংলাদেশি হিসেবে নথিভুক্ত। কোম্পানিটির নিবন্ধিত অফিস লন্ডনের ২২ গিলবার্ট স্ট্রিটে অবস্থিত।
অ্যাপার্টমেন্টটি যুক্তরাজ্যের অন্যতম বড় আবাসন নির্মাতা ‘বার্কলে হোমস’-এর কাছ থেকে ৯৯৯ বছরের ইজারা চুক্তিতে কেনা হয়। ২০২৪ সালের ১৭ জানুয়ারি বিটকম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ও সেনক্যাপ লিমিটেড নামের একটি প্রাইভেট ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি পুনঃ মর্টগেজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দলিল অনুযায়ী, অ্যাপার্টমেন্টটির ওপর ফিক্সড ও ফ্লোটিং চার্জ আরোপ করা হয়েছে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশের রাজনীতির প্রভাবশালী চৌধুরী পরিবারের সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে আলোচিত। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানানো হয়, তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক দেশে বিপুল সম্পদ অর্জন এবং অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগে তদন্ত চলছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের একটি জাতীয় গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে প্রকাশ হয়, গত এক বছরে যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামে অন্তত ২০টি সম্পত্তি সংক্রান্ত বিক্রয়, হস্তান্তর বা মর্টগেজ আবেদন জমা পড়ে। এই তালিকায় আনিসুজ্জামানের নামও রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, আনিসুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনের অভিজাত রিজেন্টস পার্ক এলাকায় এক কোটি পাউন্ড মূল্যের একটি জর্জিয়ান টাউনহাউসসহ চারটি সম্পত্তির বিক্রয় বা পুনঃ মর্টগেজের জন্য আবেদন করেছেন।
এর আগে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে থাকা প্রায় ১৭ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করে। এসব সম্পদের অর্থের উৎস এখনও যাচাইয়ের অধীন এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরে থাকা এসব সম্পত্তির বেশিরভাগই লন্ডনের অভিজাত এলাকায় অবস্থিত।
এই ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে ক্ষমতার চেয়ারে বসা রাজনীতিবিদদের পরিবারের সদস্যদের বিদেশে বিপুল সম্পদ সঞ্চয়ের বিষয়টি এবং এটি এখন আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থাগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।