ঢাকা ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

    শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু-সরাসরি সম্প্রচার

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:১৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে

    ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ সূচনা বক্তব্য ও প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। রবিবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়, যা ট্রাইব্যুনালের অনুমতিক্রমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।

    এই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আসামি হিসেবে আছেন। একই মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। তিনি আদালতে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দিতে সম্মত হয়েছেন।

    প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে: প্রথমত, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সন্ত্রাসীদের হামলায় দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা নিহত হয় এবং প্রায় ২৫ হাজার আহত হয়।

    দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের দমন করতে নির্দেশ দেন, যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে কার্যকর হয়। এ সংক্রান্ত দুটি অডিও রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ও ঢাকার সাবেক মেয়রের সঙ্গে কথোপকথনে এসব নির্দেশনার প্রমাণ মেলে।

    তৃতীয় অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করার নির্দেশের জন্য আসামিদের দায়ী করা হয়েছে। চতুর্থ অভিযোগে রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং পঞ্চম অভিযোগে আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

    এটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে করা চারটি মামলার একটি। এর আগে গত ২ জুলাই আদালত অবমাননার মামলায় তাঁকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে শুরু হওয়া প্রথম বিচারিক প্রক্রিয়া।

    এ ছাড়া গুম, খুন, নির্যাতনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মানবতাবিরোধী মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২৪ আগস্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হেফাজত নেতা-কর্মীদের হত্যার অভিযোগে দায়ের করা আরেক মামলায়ও শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে, যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে ১২ আগস্ট।

    আলোচিত এই বিচারিক কার্যক্রম বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু-সরাসরি সম্প্রচার

    আপডেট সময় ১২:১৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

    ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ সূচনা বক্তব্য ও প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। রবিবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়, যা ট্রাইব্যুনালের অনুমতিক্রমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।

    এই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আসামি হিসেবে আছেন। একই মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। তিনি আদালতে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দিতে সম্মত হয়েছেন।

    প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে: প্রথমত, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সন্ত্রাসীদের হামলায় দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা নিহত হয় এবং প্রায় ২৫ হাজার আহত হয়।

    দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের দমন করতে নির্দেশ দেন, যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে কার্যকর হয়। এ সংক্রান্ত দুটি অডিও রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ও ঢাকার সাবেক মেয়রের সঙ্গে কথোপকথনে এসব নির্দেশনার প্রমাণ মেলে।

    তৃতীয় অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করার নির্দেশের জন্য আসামিদের দায়ী করা হয়েছে। চতুর্থ অভিযোগে রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং পঞ্চম অভিযোগে আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

    এটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে করা চারটি মামলার একটি। এর আগে গত ২ জুলাই আদালত অবমাননার মামলায় তাঁকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে শুরু হওয়া প্রথম বিচারিক প্রক্রিয়া।

    এ ছাড়া গুম, খুন, নির্যাতনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মানবতাবিরোধী মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২৪ আগস্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হেফাজত নেতা-কর্মীদের হত্যার অভিযোগে দায়ের করা আরেক মামলায়ও শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে, যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে ১২ আগস্ট।

    আলোচিত এই বিচারিক কার্যক্রম বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।