মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। রোববার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানায়, এক দিনে আট ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় নাজরান অঞ্চলে চারজন সোমালিও তিনজন ইথিওপীয় নাগরিককে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে এই সাজা দেওয়া হয়। একই দিনে মাকে হত্যার দায়ে এক সৌদি নাগরিকের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌদি সরকার বর্তমানে মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এর ফলেই দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের হার নজিরবিহীন হারে বাড়ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ২৩০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যার মধ্যে মাদক সংশ্লিষ্ট মামলায় রয়েছে ১৫৪ জন।

এর আগে ২০২৪ সালের পুরো বছরে ৩৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল, যা ১৯৯০-এর দশকে রেকর্ড সংরক্ষণ শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ। চলতি বছরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

২০২২ সালের শেষ দিকে প্রায় তিন বছর পর আবারও মাদক সংশ্লিষ্ট মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শুরু করে সৌদি সরকার। এএফপির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ১৯ জন, ২০২৩ সালে ২ জন এবং চলতি বছরের অর্ধেক সময়েই ১১৭ জনকে মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো সৌদি সরকারের এই কঠোর অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক উপ-পরিচালক ক্রিস্টিন বেকারলে বলেন, “এটি এক ভয়াবহ প্রবণতা, যেখানে বিদেশিদের এমন অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, যার জন্য কখনই সর্বোচ্চ এই সাজা প্রযোজ্য নয়।”

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সৌদি সরকার ‘ভিশন ২০৩০’ সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে আধুনিক ও উদার সমাজের যে ভাবমূর্তি তুলে ধরছে, মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার ফলে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, জনশৃঙ্খলা রক্ষায় মৃত্যুদণ্ড প্রয়োজনীয় এবং সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষে এবং আপিলের সুযোগ নিশ্চিত করেই এই সাজা কার্যকর করা হয়।