ঢাকা ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    হাওড়ে ভাসমান স্কুলে বিনামূল্যে শিক্ষা-উপকরণ, বদলে যাচ্ছে ৩০০ শিশুর জীবন

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:১৭:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
    • / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে

    কিশোরগঞ্জের নিকলীর ঘোড়াউত্রা নদীপারের ছাতিরচর ও সিংপুর ইউনিয়নের শিশুদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে আটটি ভাসমান স্কুল। স্থানীয়ভাবে ‘জলে ভাসা স্কুল’ নামে পরিচিত এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে বিনামূল্যে বই-খাতা, কলম, জ্যামিতি বক্স, স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, জুতা, টিফিন ও স্বাস্থ্যসেবা। শুধু তাই নয়, রয়েছে খেলাধুলা, লাইব্রেরি ও ফটো গ্যালারির সুযোগও।

    দুটি ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ কৃষি ও মৎস্যজীবী, যাদের অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। আর্থিক সংকটের কারণে একসময় এ অঞ্চলের বহু শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। ২০১০ সালে বেসরকারি সংস্থা পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) এ বাস্তবতা নজরে নিয়ে ছাতিরচরে চারটি ও সিংপুরে চারটি একতলা ও দ্বিতল নৌকা-ভিত্তিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে ক্লাস। শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনতে ঘাটে ঘাটে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।

    বর্তমানে এসব ভাসমান স্কুলে ৩০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। ইতোমধ্যে ১৫শ’র বেশি শিক্ষার্থী সফলভাবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে দেশের বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে।

    গত রোববার দুপুরে ঘোড়াউত্রা নদীতে ভাসমান স্কুল কার্যক্রম পরিদর্শনকালে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এসব স্কুলের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। শিক্ষক জাকিয়া আক্তার বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যের মতো মনে করি, তারাও সেভাবেই গড়ে উঠছে।” ছাতিরচরের অভিভাবক হালিমা বেগম জানান, “আমার স্বামী কৃষি শ্রমিক। অভাব-অনটনে জীবন চলে। এই জলেভাসা স্কুল না থাকলে আমার সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারতাম না।”

    ভাসমান স্কুল প্রকল্পের সমন্বয়কারী জহিরুল ইসলাম বলেন, “ইতোমধ্যেই ১৫শ’র বেশি শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেছে। অনেকে মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে।” ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “ভাসমান স্কুলগুলো সুযোগবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়ানোর দূত হয়ে উঠেছে।”

    কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম বলেন, “হাওড়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য জলেভাসা স্কুল কার্যক্রম নিঃসন্দেহে অনুকরণীয়। তবে উপজেলা ও জেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করলে এর কার্যকারিতা আরও বাড়বে।”

    এই ভাসমান স্কুলগুলো কেবল শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে না, বরং হাওড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন এক মানবিক দৃষ্টান্ত গড়ে তুলছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    হাওড়ে ভাসমান স্কুলে বিনামূল্যে শিক্ষা-উপকরণ, বদলে যাচ্ছে ৩০০ শিশুর জীবন

    আপডেট সময় ১২:১৭:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    কিশোরগঞ্জের নিকলীর ঘোড়াউত্রা নদীপারের ছাতিরচর ও সিংপুর ইউনিয়নের শিশুদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে আটটি ভাসমান স্কুল। স্থানীয়ভাবে ‘জলে ভাসা স্কুল’ নামে পরিচিত এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে বিনামূল্যে বই-খাতা, কলম, জ্যামিতি বক্স, স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, জুতা, টিফিন ও স্বাস্থ্যসেবা। শুধু তাই নয়, রয়েছে খেলাধুলা, লাইব্রেরি ও ফটো গ্যালারির সুযোগও।

    দুটি ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ কৃষি ও মৎস্যজীবী, যাদের অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। আর্থিক সংকটের কারণে একসময় এ অঞ্চলের বহু শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। ২০১০ সালে বেসরকারি সংস্থা পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) এ বাস্তবতা নজরে নিয়ে ছাতিরচরে চারটি ও সিংপুরে চারটি একতলা ও দ্বিতল নৌকা-ভিত্তিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে ক্লাস। শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনতে ঘাটে ঘাটে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।

    বর্তমানে এসব ভাসমান স্কুলে ৩০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। ইতোমধ্যে ১৫শ’র বেশি শিক্ষার্থী সফলভাবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে দেশের বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে।

    গত রোববার দুপুরে ঘোড়াউত্রা নদীতে ভাসমান স্কুল কার্যক্রম পরিদর্শনকালে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এসব স্কুলের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। শিক্ষক জাকিয়া আক্তার বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যের মতো মনে করি, তারাও সেভাবেই গড়ে উঠছে।” ছাতিরচরের অভিভাবক হালিমা বেগম জানান, “আমার স্বামী কৃষি শ্রমিক। অভাব-অনটনে জীবন চলে। এই জলেভাসা স্কুল না থাকলে আমার সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারতাম না।”

    ভাসমান স্কুল প্রকল্পের সমন্বয়কারী জহিরুল ইসলাম বলেন, “ইতোমধ্যেই ১৫শ’র বেশি শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেছে। অনেকে মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে।” ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “ভাসমান স্কুলগুলো সুযোগবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়ানোর দূত হয়ে উঠেছে।”

    কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম বলেন, “হাওড়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য জলেভাসা স্কুল কার্যক্রম নিঃসন্দেহে অনুকরণীয়। তবে উপজেলা ও জেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করলে এর কার্যকারিতা আরও বাড়বে।”

    এই ভাসমান স্কুলগুলো কেবল শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে না, বরং হাওড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন এক মানবিক দৃষ্টান্ত গড়ে তুলছে।