ঢাকা ১২:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

    একাত্তরকে অতিক্রম করে চব্বিশে পৌঁছেছি, এখন রাজনীতি হবে নতুন প্রজন্মের মূল্যবোধে-নাহিদ ইসলাম

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:১০:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৬৪ বার পড়া হয়েছে

    জুলাইয়ের ‘চব্বিশ’ গণ–অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে রাজনীতিতে এক নতুন প্রেক্ষাপট ও প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা একাত্তরকে অতিক্রম করেছি এবং চব্বিশে পৌঁছেছি। এখন রাজনীতি গড়ে উঠবে নতুন মূল্যবোধের ভিত্তিতে।”

    শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুর ১২টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে “৭১ এবং ২৪” শিরোনামে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত এক পোস্টে নাহিদ ইসলাম বলেন, “একাত্তরের পক্ষে না বিপক্ষে—এই বাইনারির ওপর ভিত্তি করে তৈরি রাজনীতি আজ আর প্রাসঙ্গিক নয়। যে শক্তিগুলো এখনো সেই পুরোনো কাঠামো ফিরিয়ে আনতে চায়, তারা দেশকে অচল এক রাজনৈতিক বাস্তবতায় ফিরিয়ে নিতে চায়।”

    নাহিদ ইসলাম চব্বিশকে বর্ণনা করেছেন একাত্তরের ধারাবাহিকতা হিসেবে। তাঁর ভাষায়, “একাত্তরের আকাঙ্ক্ষা ছিল সাম্য, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার—যা চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পুনঃঘোষিত হয়েছে। যেখানে মুজিববাদ একাত্তরকে একটি ভারতীয় বয়ানে সীমাবদ্ধ করে জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করেছিল, সেখানে চব্বিশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে পুনরুদ্ধার করেছে। এটি ছিল কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ গণ–আন্দোলন।”

    তিনি বলেন, “চব্বিশ কেবল একটি মুহূর্ত নয়, এটি একটি নতুন প্রজন্মের জাগরণ। এই প্রজন্ম বাইনারি বয়ানের অতীত কাঠামো অতিক্রম করে নতুন রাজনৈতিক সূচনা চায়। তাদের আকাঙ্ক্ষা ও মূল্যবোধকে কেন্দ্র করেই চব্বিশের অভ্যুত্থান থেকে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে।”

    নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমাদের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্র ও সমাজকে গণতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধ করতে মুজিববাদসহ সকল কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করা। আজকের প্রজন্ম একাত্তরকে ইতিহাসের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে, তবে সেটিকে আর রাজনৈতিক বৈধতার একমাত্র আধার হিসেবে মানতে চায় না। একাত্তর যেমন থাকবে রাষ্ট্রের একটি সম্মানজনক ভিত্তি হিসেবে, তেমনি সাতচল্লিশও থাকবে ইতিহাসের মর্যাদায়। কিন্তু এই ঘটনাগুলো আর রাজনীতির হাতিয়ার হবে না।”

    তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “এমনটা নয় যে একাত্তর বা সাতচল্লিশ নিয়ে আলোচনা হবে না—বরং নতুন বাস্তবতায় আমরা ঐতিহাসিক প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নিতে পারি। এই প্রজন্ম চায় সম্মান, না যে রাজনৈতিক আধিপত্য যেটি ইতিহাসকে ব্যবহার করে।”

    চব্বিশকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতের রাজনীতির রূপরেখা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, “যারা আবার একাত্তরের রাজনীতিতে ফিরতে চায়, তারা চব্বিশের বাস্তবতাকে অস্বীকার করছে। অনেক রাজনৈতিক শক্তির জন্য চব্বিশে অংশগ্রহণ ছিল এক প্রকার প্রায়শ্চিত্ত। তবে সেই প্রায়শ্চিত্ত তখনই অর্থহীন হয়ে যাবে, যদি তারা আবার পুরোনো মতাদর্শে ফিরে যায়। এখন আমাদের দায়িত্ব, সেই পুরোনো বাইনারি কাঠামোর পুনরুত্থান রোধ করা।”

    তিনি আরও বলেন, “চব্বিশ কখনোই প্রতিশোধের জন্য ছিল না। যারা এটিকে প্রতিশোধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তারা এর প্রকৃত মর্ম বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। চব্বিশ ছিল জাতীয় ঐক্য, পুনর্মিলন ও ভবিষ্যৎ নির্মাণের এক যৌথ প্রয়াস—যা গড়ে উঠবে ঐকমত্য, সহমর্মিতা ও যৌথ দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে, কোনো প্রতিশোধের চক্র নয়।”

    নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় যে, এনসিপির নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে এক নতুন প্রজন্ম আত্মপ্রকাশ করেছে, যারা ঐতিহাসিক সত্যকে সম্মান জানালেও আধিপত্যের রাজনীতি নয়, চায় গণতন্ত্র, ন্যায্যতা ও সম্মিলিত ভবিষ্যতের নির্মাণ।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    একাত্তরকে অতিক্রম করে চব্বিশে পৌঁছেছি, এখন রাজনীতি হবে নতুন প্রজন্মের মূল্যবোধে-নাহিদ ইসলাম

    আপডেট সময় ১২:১০:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

    জুলাইয়ের ‘চব্বিশ’ গণ–অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে রাজনীতিতে এক নতুন প্রেক্ষাপট ও প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা একাত্তরকে অতিক্রম করেছি এবং চব্বিশে পৌঁছেছি। এখন রাজনীতি গড়ে উঠবে নতুন মূল্যবোধের ভিত্তিতে।”

    শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুর ১২টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে “৭১ এবং ২৪” শিরোনামে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত এক পোস্টে নাহিদ ইসলাম বলেন, “একাত্তরের পক্ষে না বিপক্ষে—এই বাইনারির ওপর ভিত্তি করে তৈরি রাজনীতি আজ আর প্রাসঙ্গিক নয়। যে শক্তিগুলো এখনো সেই পুরোনো কাঠামো ফিরিয়ে আনতে চায়, তারা দেশকে অচল এক রাজনৈতিক বাস্তবতায় ফিরিয়ে নিতে চায়।”

    নাহিদ ইসলাম চব্বিশকে বর্ণনা করেছেন একাত্তরের ধারাবাহিকতা হিসেবে। তাঁর ভাষায়, “একাত্তরের আকাঙ্ক্ষা ছিল সাম্য, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার—যা চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পুনঃঘোষিত হয়েছে। যেখানে মুজিববাদ একাত্তরকে একটি ভারতীয় বয়ানে সীমাবদ্ধ করে জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করেছিল, সেখানে চব্বিশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে পুনরুদ্ধার করেছে। এটি ছিল কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ গণ–আন্দোলন।”

    তিনি বলেন, “চব্বিশ কেবল একটি মুহূর্ত নয়, এটি একটি নতুন প্রজন্মের জাগরণ। এই প্রজন্ম বাইনারি বয়ানের অতীত কাঠামো অতিক্রম করে নতুন রাজনৈতিক সূচনা চায়। তাদের আকাঙ্ক্ষা ও মূল্যবোধকে কেন্দ্র করেই চব্বিশের অভ্যুত্থান থেকে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে।”

    নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমাদের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্র ও সমাজকে গণতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধ করতে মুজিববাদসহ সকল কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করা। আজকের প্রজন্ম একাত্তরকে ইতিহাসের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে, তবে সেটিকে আর রাজনৈতিক বৈধতার একমাত্র আধার হিসেবে মানতে চায় না। একাত্তর যেমন থাকবে রাষ্ট্রের একটি সম্মানজনক ভিত্তি হিসেবে, তেমনি সাতচল্লিশও থাকবে ইতিহাসের মর্যাদায়। কিন্তু এই ঘটনাগুলো আর রাজনীতির হাতিয়ার হবে না।”

    তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “এমনটা নয় যে একাত্তর বা সাতচল্লিশ নিয়ে আলোচনা হবে না—বরং নতুন বাস্তবতায় আমরা ঐতিহাসিক প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নিতে পারি। এই প্রজন্ম চায় সম্মান, না যে রাজনৈতিক আধিপত্য যেটি ইতিহাসকে ব্যবহার করে।”

    চব্বিশকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতের রাজনীতির রূপরেখা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, “যারা আবার একাত্তরের রাজনীতিতে ফিরতে চায়, তারা চব্বিশের বাস্তবতাকে অস্বীকার করছে। অনেক রাজনৈতিক শক্তির জন্য চব্বিশে অংশগ্রহণ ছিল এক প্রকার প্রায়শ্চিত্ত। তবে সেই প্রায়শ্চিত্ত তখনই অর্থহীন হয়ে যাবে, যদি তারা আবার পুরোনো মতাদর্শে ফিরে যায়। এখন আমাদের দায়িত্ব, সেই পুরোনো বাইনারি কাঠামোর পুনরুত্থান রোধ করা।”

    তিনি আরও বলেন, “চব্বিশ কখনোই প্রতিশোধের জন্য ছিল না। যারা এটিকে প্রতিশোধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তারা এর প্রকৃত মর্ম বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। চব্বিশ ছিল জাতীয় ঐক্য, পুনর্মিলন ও ভবিষ্যৎ নির্মাণের এক যৌথ প্রয়াস—যা গড়ে উঠবে ঐকমত্য, সহমর্মিতা ও যৌথ দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে, কোনো প্রতিশোধের চক্র নয়।”

    নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় যে, এনসিপির নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে এক নতুন প্রজন্ম আত্মপ্রকাশ করেছে, যারা ঐতিহাসিক সত্যকে সম্মান জানালেও আধিপত্যের রাজনীতি নয়, চায় গণতন্ত্র, ন্যায্যতা ও সম্মিলিত ভবিষ্যতের নির্মাণ।