ঢাকা ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

    সীমানা নিয়ে ইসির শুনানিতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, উত্তপ্ত পরিবেশ

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৪:৩২:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৬১ বার পড়া হয়েছে

    ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদীয় আসনের খসড়া সীমানা নিয়ে দাবি-আপত্তির শুনানিতে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই শুনানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের পক্ষে ও বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও ব্যাপক হট্টগোল হয়।

    শুনানিতে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সমর্থকদের সঙ্গে অংশ নিয়ে ইসির প্রকাশিত খসড়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। অপরদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপির নেতা খুর্শিদ আলম, অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম ও অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেনসহ আরও কয়েকজন খসড়ার বিপক্ষে বক্তব্য দেন। তারা অভিযোগ করেন, বিজয়নগর উপজেলা থেকে তিনটি ইউনিয়ন—বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর—ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে, যা তারা মেনে নিতে পারছেন না। তাদের দাবি, উপজেলাকে অখণ্ড রাখা হোক।

    তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে দুপুর পৌনে ১টার দিকে দুই পক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে আসেন। পরে ইসি সচিব আখতার আহমেদ শুনানি শেষ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে মিলনায়তন ত্যাগের অনুরোধ জানান।

    শুনানি শেষে রুমিন ফারহানা সাংবাদিকদের বলেন, “যেটা ১৫ বছরে হয়নি সেটা আজ হয়েছে। আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যে বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য ১৫ বছর লড়াই করলাম, তারাই আজ আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। নির্বাচনের আগে সীমানা নিয়ে দলে এমন পরিস্থিতি হলে নির্বাচনে কী হবে অনুমেয়।” তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এর প্রার্থী ২০-২৫ জনকে নিয়ে গুন্ডামি করেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। কমিশনের গাম্ভীর্য ও সম্মানের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।”

    অন্যদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে উপস্থিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কর্মীদের ওপরও হামলার অভিযোগ উঠেছে। এনসিপি দাবি করেছে, তাদের তিন নেতা—প্রকৌশলী আমিনুল হক চৌধুরী, মুস্তফা সুমন ও আতাউল্লাহ—আহত হয়েছেন। আমিনুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “রুমিন ফারহানার লোকজন আমাদের আক্রমণ করেছে। আমরা দাবি নিয়ে ইসিতে এসেছিলাম। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনেই আমাদের পেটানো হয়েছে।”

    এ বিষয়ে রুমিন ফারহানাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “তারা এনসিপি-জামায়াত ছিল, নাকি গুন্ডা-মাস্তান ছিল সেটা আমরা দেখিনি।” সংঘর্ষ শুধু ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; নির্বাচন ভবনের বাইরে চলছিল উত্তেজনা। শুনানির প্রথম দিনেই বাইরে ব্যাপক হট্টগোল হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গেটের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। সেখানে জলকামানও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

    দিনের শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি সাংবাদিকদের শুনানিকক্ষে থাকতে বললেও ক্যামেরা প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রথমেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের খসড়া নিয়ে শুনানি শুরু হয়। খসড়া প্রকাশের পর থেকেই এ আসনগুলোকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা পড়েছিল। সেই আবেদনের শুনানিতেই এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    সীমানা নিয়ে ইসির শুনানিতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, উত্তপ্ত পরিবেশ

    আপডেট সময় ০৪:৩২:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

    ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদীয় আসনের খসড়া সীমানা নিয়ে দাবি-আপত্তির শুনানিতে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই শুনানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের পক্ষে ও বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও ব্যাপক হট্টগোল হয়।

    শুনানিতে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সমর্থকদের সঙ্গে অংশ নিয়ে ইসির প্রকাশিত খসড়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। অপরদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপির নেতা খুর্শিদ আলম, অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম ও অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেনসহ আরও কয়েকজন খসড়ার বিপক্ষে বক্তব্য দেন। তারা অভিযোগ করেন, বিজয়নগর উপজেলা থেকে তিনটি ইউনিয়ন—বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর—ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে, যা তারা মেনে নিতে পারছেন না। তাদের দাবি, উপজেলাকে অখণ্ড রাখা হোক।

    তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে দুপুর পৌনে ১টার দিকে দুই পক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে আসেন। পরে ইসি সচিব আখতার আহমেদ শুনানি শেষ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে মিলনায়তন ত্যাগের অনুরোধ জানান।

    শুনানি শেষে রুমিন ফারহানা সাংবাদিকদের বলেন, “যেটা ১৫ বছরে হয়নি সেটা আজ হয়েছে। আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যে বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য ১৫ বছর লড়াই করলাম, তারাই আজ আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। নির্বাচনের আগে সীমানা নিয়ে দলে এমন পরিস্থিতি হলে নির্বাচনে কী হবে অনুমেয়।” তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এর প্রার্থী ২০-২৫ জনকে নিয়ে গুন্ডামি করেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। কমিশনের গাম্ভীর্য ও সম্মানের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।”

    অন্যদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে উপস্থিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কর্মীদের ওপরও হামলার অভিযোগ উঠেছে। এনসিপি দাবি করেছে, তাদের তিন নেতা—প্রকৌশলী আমিনুল হক চৌধুরী, মুস্তফা সুমন ও আতাউল্লাহ—আহত হয়েছেন। আমিনুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “রুমিন ফারহানার লোকজন আমাদের আক্রমণ করেছে। আমরা দাবি নিয়ে ইসিতে এসেছিলাম। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনেই আমাদের পেটানো হয়েছে।”

    এ বিষয়ে রুমিন ফারহানাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “তারা এনসিপি-জামায়াত ছিল, নাকি গুন্ডা-মাস্তান ছিল সেটা আমরা দেখিনি।” সংঘর্ষ শুধু ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; নির্বাচন ভবনের বাইরে চলছিল উত্তেজনা। শুনানির প্রথম দিনেই বাইরে ব্যাপক হট্টগোল হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গেটের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। সেখানে জলকামানও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

    দিনের শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি সাংবাদিকদের শুনানিকক্ষে থাকতে বললেও ক্যামেরা প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রথমেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের খসড়া নিয়ে শুনানি শুরু হয়। খসড়া প্রকাশের পর থেকেই এ আসনগুলোকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা পড়েছিল। সেই আবেদনের শুনানিতেই এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।