অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে একমত ঢাকা-ইসলামাবাদ

- আপডেট সময় ০৫:১৯:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে
অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, দুই দেশই আলোচনার মাধ্যমে অতীতের সমস্যাগুলো পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।
রোববার (২৪ আগস্ট) ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “আপনারা নিশ্চয়ই আশা করবেন না যে ৫৪ বছরের সমস্যা আজকের একদিনের মিটিংয়ে সমাধান হয়ে যাবে।
এটা ১২-১৩ বছর পর প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক, তার আগে হিনা রব্বানির সফর ছিল দাওয়াতনির্ভর, পূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছিল না। এখানে বসে এক ঘণ্টায় সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তবে আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি, ওনারাও তাদের অবস্থান জানিয়েছেন।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, উভয় পক্ষ একমত হয়েছে যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনা করে সমাধান করতে হবে, যাতে সেগুলো সম্পর্কের পথে আর বাধা না হয়। “একটি বিষয়ে খানিকটা অগ্রগতি হয়েছে—আমরা স্বীকার করেছি, এসব ইস্যুকে পেছনে ফেলে সামনে এগোনো প্রয়োজন। আমরা এ নিয়ে ভবিষ্যতে আলাদাভাবে আলোচনা করব,” বলেন তিনি।
অমীমাংসিত বিষয়ে দুই দেশের অবস্থান একই কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি, তারা তাদের অবস্থান জানিয়েছে। তবে একমত হয়েছি যে এগুলো সমাধান করা দরকার।” ইসহাক দারের বক্তব্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে—যেখানে তিনি বলেন ১৯৭১ সালের ইস্যুতে ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি এবং ২০০২ সালে পারভেজ মোশাররফের দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে সমাধান হয়ে গেছে—তৌহিদ হোসেন সাফ জানিয়ে দেন, বাংলাদেশ এই ব্যাখ্যা মেনে নেয় না। “যদি একমত হতাম, তবে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, কিন্তু তা হয়নি।
আমাদের অবস্থান হলো: পাকিস্তানকে গণহত্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাইতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের আগে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া সম্পদের হিসাব-নিকাশ করতে হবে। এবং আটকেপড়া মানুষগুলোকে ফেরত নিতে হবে। আমি বাংলাদেশের এই অবস্থান স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেছি।”
ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে চীন ভূমিকা রাখছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “চীন ত্রিপক্ষীয় বৈঠককে উৎসাহিত করছে, পাকিস্তানেরও আগ্রহ আছে। আমরা বলেছি, চাইলে আরও দেশকে সঙ্গে আনতে পারেন, একসঙ্গে বসতে পারেন। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নয়নের কারণ এটা নয়।”
বিগত সরকারের আমলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ইচ্ছাকৃতভাবে পিছিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “আমাদের আগের সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ইচ্ছাকৃতভাবে পিছিয়ে রেখেছিল। অথচ আমরা সব দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক চাই, পাকিস্তানের সঙ্গেও। এর বাইরে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নেই।”
এর আগে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একটি চুক্তি এবং পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। একমাত্র চুক্তিটি হলো সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা বিলোপ চুক্তি। অন্যদিকে যেসব বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে সেগুলো হলো—দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যবিষয়ক যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, সাংস্কৃতিক বিনিময়, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস ও এপিপিসির মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদের (আইএসএসআই) মধ্যে সহযোগিতা।