রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয়নি

- আপডেট সময় ১২:২৬:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
- / ২৭৩ বার পড়া হয়েছে
বিচার শেষ হয়নি এখনও রানা প্লাজা ধসের। অথচ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে এ ঘটনার তিনটি মামলার একটি আটকে আছে। অন্য দুটির বিচার চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এর কারণ সাক্ষী না আসা। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগও উঠছে।
এদিকে মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানা একমাত্র জেলে রয়েছেন। বাকিরা সবাই জামিনে মুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির বিচার নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। হাজারো ভুক্তভোগী শ্রমিক ও হতাহতের পরিবারে দেখা দিয়েছে হতাশা।
সাভারে অবসস্থিত আট তলাবিশিষ্ট রানা প্লাজা ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে ধসে পড়লে এক হাজার ১৩৬ পোশাক শ্রমিক নিহত হন। আরও ১ হাজার ১৬৯ জন পঙ্গুত্ববরণ করেন। প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরের দিন পুলিশ অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করে মামলা করে। এছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করে। ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। হত্যা মামলার ৩৯ আসামির মধ্যে কারাগারে আছেন কেবল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। অন্যদের মধ্যে সাতজন পলাতক এবং ৩১ জন জামিনে আছেন।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুল হক আমিন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার কারণে ভয়াবহ এই ট্র্যাজেডির বিচার আজও শেষ হয়নি। বিচার বিভাগেরও দায় রয়েছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।
দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করেছেন সাভারের আমেনা খাতুন। এক যুগেও বিচার না হওয়ায় তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় আমার ডান পাশ অবশ হয়ে গেছে। ভারতে গিয়ে তিনবার চিকিৎসা নিয়েছি, চার মাস পর আবার যেতে হবে। এখন তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং সুচিকিৎসা প্রত্যাশা করেন তিনি।
এদিকে ত্যা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ভবন মালিক, গার্মেন্ট মালিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের ৪১ জনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
১৫ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন আগামী ১৯ মে।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবুল কালাম খান বলেন, মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য এখনও নেওয়া হয়নি। বিচার শেষ করতে হলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
তিনি জানান, সাক্ষীরা হাজির না হলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে। এতে সাক্ষী অনুপস্থিতির সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে।
ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে করা মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জুন ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। তবে চার্জ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। এই স্থগিতাদেশ এখনও প্রত্যাহার না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইশতিয়াক হোসেন বলেন, উচ্চ আদালত ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিগগির অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে আবেদন করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হবে।
ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ জিয়াউর রহমানের আদালতে রানা প্লাজা ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে । ২০১৭ সালের ২১ মে সোহেল রানাসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন (জাহাঙ্গীর) সমকালকে বলেন, গত ২৪ মার্চ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী উপস্থিত হননি। আগামী ১২ মে পরবর্তী শুনানি হবে।