আজ মহান মে দিবস

- আপডেট সময় ১০:৪৫:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
- / ৫ বার পড়া হয়েছে
আজ মহান মে দিবস। আজ বিশ্বের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালে আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই দিনে। জীবন দিয়েই সেদিন মালিকপক্ষের কাছ থেকে দাবি আদায় করেছিল। ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’ প্রতিপাদ্যে এবারও মহান মে দিবস পালিত হচ্ছে।
এরই মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ঘোষণা দিয়েছেন, এবারের মহান মে দিবসে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিতে শ্রম আইন পাকাপোক্ত করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শ্রম আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আইনটা করে দিতে চাই। আমি থাকতে থাকতেই আইনটা পাকাপোক্ত করতে চাই। একইসঙ্গে এবারের মে দিবসে সরকারের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ কর্মসূচি রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে চলতি বছরে মহান মে দিবস ঘিরে সরকারের পক্ষ থেক একগুচ্ছ আয়োজন রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
কেন এই মে দিবস?
বিশ্বজুড়ে শ্রম দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয় ১ মে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দী ও তার আগের শ্রমিকদের বঞ্চনার করুণ ইতিহাস রয়েছে এই দিবস পালননের পেছনে।
যুক্তরাষ্ট্রে এই সংগ্রাম ও ইতিহাসের শুরুটা ঘটে। ১৮৮৬ সালের ১ মে শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকেন শিকাগো শহরের হে মার্কেটে। কাজের জন্য নির্ধারিত সময় ও ন্যায্য মজুরি ছিলো তাদের দাবি। এই আন্দোল।ন ছিল যুগের পর যুগ ধরে তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বঞ্চনার প্রতিবাদ। সেসময় একজন শ্রমিককে ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা খাটানো হতো। বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেওয়া হতো খুবই সামান্য।
তবে সেদিনের শ্রমিক আন্দোলনে ঘটে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। হঠাৎ শ্রমিকদের ভিড় থেকে কেউ একজন পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় বিষ্মিত হয়েছিলেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া সবাই। বোমা নিক্ষেপের পরপরই গুলি চালায় পুলিশ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১২-থেকে ১৩ জন শ্রমিকের। পুলিশসহ এই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ছিলো আরও বেশি।
শ্রমজীবী মানুষের বঞ্চনার পাশাপাশি কণ্ঠরোধের চেষ্টার এক নির্মম ইতিহাস তৈরি হয় সেদিন। যুক্তরাষ্ট্রে ন্যায্য দাবির জন্য আন্দোলনে প্রাণ হারানো সেই মানুষগুলোর স্মরণে প্রতিবছর পালন করা হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। পরে নিজেদের অধিকার আদায়ে ইতিহাস সৃষ্টির এক নিদর্শন হিসেবে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় মে দিবস।
রেমন্ড লাভিনে নামে এক ব্যক্তি ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে পরের বছর থেকে এই প্রতিবাদের বার্ষিকী পালন করার প্রস্তাব করেন। সূচনা হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের। আর ১৮৯১ সালে প্যারিসেই দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। প্রথমবারের মতো স্বীকৃতি পায় মে দিবস।
আমস্টারডাম শহরে সমাজতন্ত্রীরা সব গণতান্ত্রিক দল ও ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি নতুন এক আহ্বান জানান ১৯০৪ সালে। নিহত সেই শ্রমিকদের স্মরণে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে ১ মে মিছিল ও শোভাযাত্রার আয়োজন করে তারা। একইসঙ্গে সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সব শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
বলশেভিক বিপ্লবের পর থেকে ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বিপুল সমারোহে দেশটিতে মে দিবস উদযাপিত হতে থাকে। পাশাপাশি এই উপলক্ষে দেশটিতে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। এরপর থেকেই এই দিবস শ্রমিকদের ওপর জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক প্রতীকী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে প্রতিবছর পালন করে বাংলাদেশ। দিবসটি উপলক্ষে এবারও বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীসরকার
যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবারের মে দিবসের আয়োজন ঘিরে
>> শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় বিশেষ বিজ্ঞাপন প্রচার।
>> দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান ও বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচার।
>> মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপর বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান।
>> মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত, প্রচারিত, প্রদর্শিত মানসম্মত সংবাদ, স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক, রিপোর্টার, চিত্রগ্রাহক নির্বাচনপূর্বক অ্যাওয়ার্ড প্রদান।
>> আজ সকালে র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। মেহনতি মানুষের অবদান তুলে ধরার জন্য ডকুমেন্টারি ও টিভিসি প্রচার করা হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলায় সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে।
>> মহান মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’ ক্ষুদেবার্তা সব মোবাইল ফোন গ্রাহকের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।