১১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন জ্যাকি চ্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৪:২০:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে

তিনি একজন কুংফু কিংবদন্তি, অ্যাকশনের রাজা, এবং বিশ্ব চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। জ্যাকি চ্যান—যার নাম শুনলেই মনে পড়ে মার্শাল আর্ট, হাস্যরস, আর অবিশ্বাস্য স্টান্টের এক অপূর্ব মিশ্রণ। এবার সুইজারল্যান্ডের লোকার্নো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব তাকে সম্মানিত করতে যাচ্ছে আজীবন সম্মাননা দিয়ে।

এটি শুধু একটি পুরস্কার নয়, বরং পূর্ব ও পশ্চিমের চলচ্চিত্র জগতের মধ্যে সেতুবন্ধনকারী এক মহান শিল্পীর জীবনগাথা। আসুন জেনে নিই জ্যাকি চ্যানের এই অসাধারণ যাত্রার গল্প। আগামী ৬ থেকে ১৬ আগস্ট সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে লোকার্নো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসর। এই উৎসব স্বাধীন চলচ্চিত্র ও শিল্পীদের সম্মান জানানোর জন্য বিখ্যাত।

এবার তারা জ্যাকি চ্যানকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করছে, যিনি তার অসাধারণ কাজের মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিমের চলচ্চিত্র শিল্পের মধ্যে এক অনন্য সেতু তৈরি করেছেন। উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হবে জ্যাকির উপস্থিতি। তার পরিচালিত ও অভিনীত দুটি কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘প্রজেক্ট এ’ (১৯৮৩) এবং ‘পুলিশ স্টোরি’ (১৯৮৫) প্রদর্শিত হবে।

এছাড়া, ১০ আগস্ট তিনি একটি সরাসরি আলোচনা সভায় অংশ নেবেন, যেখানে ভক্ত ও চলচ্চিত্রপ্রেমীরা তার জীবন ও কাজ সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন।

১৯৫৪ সালের ৭ এপ্রিল হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন চ্যান কং স্যাং, যিনি বিশ্বব্যাপী জ্যাকি চ্যান নামে পরিচিত। তার শৈশব কেটেছে দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্যে। কম্যুনিস্ট শাসন থেকে বাঁচতে তার বাবা-মা ৭ বছর বয়সী জ্যাকিকে হংকংয়ে রেখে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।

নিঃসঙ্গ জ্যাকি হংকংয়ের চাইনিজ অপেরা ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নেন, যেখানে তিনি মার্শাল আর্ট, সঙ্গীত, অভিনয়, এবং অ্যাক্রোবেটিকস শিখেন। এই প্রশিক্ষণই তার জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। পরবর্তীতে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় যান এবং নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু ভাগ্যের মোড় ঘুরে যায় যখন মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি হলিউড কিংবদন্তি ব্রুস লির স্টান্টম্যান হিসেবে কাজের সুযোগ পান।

১৯৭০-এর দশকে জ্যাকি চ্যান প্রথমবার প্রধান চরিত্রে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। তার অনন্য অ্যাকশন-কমেডি ধরন, সাহসী স্টান্ট, এবং মার্শাল আর্টের দক্ষতা তাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলে। তিনি কখনো বডি ডাবল ব্যবহার করেননি, নিজেই সব স্টান্ট করেছেন। এর জন্য তিনি বহুবার আঘাত পেয়েছেন—ভেঙেছে নাক, হাতের আঙুল, কলারবোন, এমনকি মাথার খুলিও।

তার এই নিষ্ঠা ও সাহসিকতার জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে ‘সবচেয়ে বেশি স্টান্ট করা অভিনেতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ৫৬ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ২০০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং ২০১৬ সালে সম্মানসূচক অস্কার পুরস্কার অর্জন করেছেন।

জ্যাকি চ্যান শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি একাধারে পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, অ্যাকশন কোরিওগ্রাফার, কণ্ঠশিল্পী, এবং উদ্যোক্তা। তিনি ক্যান্টোনিজ, ম্যান্ডারিন, ইংরেজি, জাপানি, জার্মান, কোরিয়ান, এবং থাই ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন।

তার চলচ্চিত্রগুলো শুধু বিনোদনই দেয়নি, বরং পূর্ব ও পশ্চিমের সংস্কৃতির মধ্যে একটি সেতু তৈরি করেছে। ‘রাশ আওয়ার’, ‘দ্য কারাতে কিড’, ‘শাংহাই নুন’—এই সিনেমাগুলো তার বৈশ্বিক প্রভাবের প্রমাণ। তিনি তার কাজের মাধ্যমে হাসি, উত্তেজনা, এবং মানবিক বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের প্রতিটি কোণে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন জ্যাকি চ্যান

আপডেট সময় ০৪:২০:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

তিনি একজন কুংফু কিংবদন্তি, অ্যাকশনের রাজা, এবং বিশ্ব চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। জ্যাকি চ্যান—যার নাম শুনলেই মনে পড়ে মার্শাল আর্ট, হাস্যরস, আর অবিশ্বাস্য স্টান্টের এক অপূর্ব মিশ্রণ। এবার সুইজারল্যান্ডের লোকার্নো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব তাকে সম্মানিত করতে যাচ্ছে আজীবন সম্মাননা দিয়ে।

এটি শুধু একটি পুরস্কার নয়, বরং পূর্ব ও পশ্চিমের চলচ্চিত্র জগতের মধ্যে সেতুবন্ধনকারী এক মহান শিল্পীর জীবনগাথা। আসুন জেনে নিই জ্যাকি চ্যানের এই অসাধারণ যাত্রার গল্প। আগামী ৬ থেকে ১৬ আগস্ট সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে লোকার্নো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসর। এই উৎসব স্বাধীন চলচ্চিত্র ও শিল্পীদের সম্মান জানানোর জন্য বিখ্যাত।

এবার তারা জ্যাকি চ্যানকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করছে, যিনি তার অসাধারণ কাজের মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিমের চলচ্চিত্র শিল্পের মধ্যে এক অনন্য সেতু তৈরি করেছেন। উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হবে জ্যাকির উপস্থিতি। তার পরিচালিত ও অভিনীত দুটি কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘প্রজেক্ট এ’ (১৯৮৩) এবং ‘পুলিশ স্টোরি’ (১৯৮৫) প্রদর্শিত হবে।

এছাড়া, ১০ আগস্ট তিনি একটি সরাসরি আলোচনা সভায় অংশ নেবেন, যেখানে ভক্ত ও চলচ্চিত্রপ্রেমীরা তার জীবন ও কাজ সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন।

১৯৫৪ সালের ৭ এপ্রিল হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন চ্যান কং স্যাং, যিনি বিশ্বব্যাপী জ্যাকি চ্যান নামে পরিচিত। তার শৈশব কেটেছে দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্যে। কম্যুনিস্ট শাসন থেকে বাঁচতে তার বাবা-মা ৭ বছর বয়সী জ্যাকিকে হংকংয়ে রেখে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।

নিঃসঙ্গ জ্যাকি হংকংয়ের চাইনিজ অপেরা ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নেন, যেখানে তিনি মার্শাল আর্ট, সঙ্গীত, অভিনয়, এবং অ্যাক্রোবেটিকস শিখেন। এই প্রশিক্ষণই তার জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। পরবর্তীতে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় যান এবং নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু ভাগ্যের মোড় ঘুরে যায় যখন মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি হলিউড কিংবদন্তি ব্রুস লির স্টান্টম্যান হিসেবে কাজের সুযোগ পান।

১৯৭০-এর দশকে জ্যাকি চ্যান প্রথমবার প্রধান চরিত্রে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। তার অনন্য অ্যাকশন-কমেডি ধরন, সাহসী স্টান্ট, এবং মার্শাল আর্টের দক্ষতা তাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলে। তিনি কখনো বডি ডাবল ব্যবহার করেননি, নিজেই সব স্টান্ট করেছেন। এর জন্য তিনি বহুবার আঘাত পেয়েছেন—ভেঙেছে নাক, হাতের আঙুল, কলারবোন, এমনকি মাথার খুলিও।

তার এই নিষ্ঠা ও সাহসিকতার জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে ‘সবচেয়ে বেশি স্টান্ট করা অভিনেতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ৫৬ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ২০০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং ২০১৬ সালে সম্মানসূচক অস্কার পুরস্কার অর্জন করেছেন।

জ্যাকি চ্যান শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি একাধারে পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, অ্যাকশন কোরিওগ্রাফার, কণ্ঠশিল্পী, এবং উদ্যোক্তা। তিনি ক্যান্টোনিজ, ম্যান্ডারিন, ইংরেজি, জাপানি, জার্মান, কোরিয়ান, এবং থাই ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন।

তার চলচ্চিত্রগুলো শুধু বিনোদনই দেয়নি, বরং পূর্ব ও পশ্চিমের সংস্কৃতির মধ্যে একটি সেতু তৈরি করেছে। ‘রাশ আওয়ার’, ‘দ্য কারাতে কিড’, ‘শাংহাই নুন’—এই সিনেমাগুলো তার বৈশ্বিক প্রভাবের প্রমাণ। তিনি তার কাজের মাধ্যমে হাসি, উত্তেজনা, এবং মানবিক বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের প্রতিটি কোণে।