ঢাকা ০৭:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫
পেহেলগাম ইস্যু

ভারত-পাক সীমান্তের মানুষের রাত কাটছে বাংকারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১২:২৪:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ফের বাড়ছে চাপা উত্তেজনা! পেহেলগাম ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সীমান্তের সাধারণ মানুষের জীবনে।

সীমান্তের কৃষক ও শ্রমজীবী পরিবারগুলো এখন চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই পুরনো দিনের বাংকারগুলো পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত।

যাদের বাংকার নেই, তারা নতুন করে বাংকার খোঁড়া শুরু করেছে। তবে স্থানীয়দের আশঙ্কা, এসব বাংকার হয়তো গুলির আঘাত ঠেকাতে পারবে, কিন্তু গোলার ভয়াবহতা থেকে তাদের রক্ষা করতে পারবে না।

পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্তে গোলাগুলি যেন নিত্যদিনের ঘটনা। সীমান্তবাসী গোলাগুলির শব্দ শুনেই বড় হয়েছে।

তবে এবারের পরিস্থিতিকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জটিল মনে করছেন উভয় দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষ। বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তের ৭৪৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে উত্তেজনা সবচেয়ে বেশি।

যুদ্ধের আবহ জিইয়ে রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে উভয় দেশের সরকার। শুক্রবার পাকিস্তান স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘আবদালি’র সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারত গতকাল শনিবার পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিস্তৃত সীমান্ত প্রায় তিন হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্ত ৭৪৪ কিলোমিটার। এছাড়াও এখানে রয়েছে মাত্র ৩৪ কিলোমিটারের একটি সরু সীমান্ত, যাকে সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়।

১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের তরফে একে ‘সিজফায়ার লাইন’ বা যুদ্ধবিরতি রেখা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও, সিমলা চুক্তির অধীনে উভয় দেশ একে নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসি হিসেবে জানে। জম্মু, সাম্বা ও কাঠুয়াসংলগ্ন সীমান্তকে ভারত ‘ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার’ এবং পাকিস্তান সেটাকে ‘ওয়ার্কিং বাউন্ডারি’ বলে অভিহিত করে।

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত সরকার পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। এনডিটিভির তথ্য অনুযায়ী, ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও জননীতির স্বার্থে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শুক্রবারের আদেশে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে উৎপাদিত বা সেখান থেকে রপ্তানি হওয়া সব পণ্যের প্রবেশ বন্ধ থাকবে এবং এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

পেহেলগামের হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ায় নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি অঞ্চলের মানুষ এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাড়ের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

আতঙ্কিত মানুষজন নিজেদের সুরক্ষার জন্য বাংকার সংস্কারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। টানা আট দিন ধরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলির কারণে সীমান্তবাসী বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতেই বাড়ির নিচে বাংকার তৈরির কাজ শুরু করেছেন পীরজাদা সৈয়দ নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, সীমান্তে গোলাগুলির ভয়াবহ পরিণতি তারা এর আগেও দেখেছেন।

তাই যেকোনো পরিস্থিতির জন্য ভূগর্ভস্থ বাংকার তৈরি করছেন, যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারবেন। জানা গেছে, অতিরিক্ত সামরিক তৎপরতা এবং রাতের আকাশে জেট বোমারু বিমানের আওয়াজ সীমান্তবাসীর মধ্যে গভীর ভয়ের সৃষ্টি করেছে।

২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে নিয়ন্ত্রণরেখায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে অভিযোগ রয়েছে, উভয় দেশের সেনাবাহিনী সেই চুক্তি পুরোপুরিভাবে মেনে চলতে পারেনি।

এরপর ২০২০ সালে লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে বিপুল সংখ্যক সেনা সরিয়ে লাদাখে স্থানান্তর করে ভারত।

এর কয়েক মাস পর, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে পূর্বের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য আরও একটি চুক্তি হয়। কিন্তু পেহেলগামের সাম্প্রতিক ঘটনার পর সেই চুক্তি আবারও ভেঙেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

পেহেলগাম ইস্যু

ভারত-পাক সীমান্তের মানুষের রাত কাটছে বাংকারে

আপডেট সময় ১২:২৪:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ফের বাড়ছে চাপা উত্তেজনা! পেহেলগাম ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সীমান্তের সাধারণ মানুষের জীবনে।

সীমান্তের কৃষক ও শ্রমজীবী পরিবারগুলো এখন চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই পুরনো দিনের বাংকারগুলো পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত।

যাদের বাংকার নেই, তারা নতুন করে বাংকার খোঁড়া শুরু করেছে। তবে স্থানীয়দের আশঙ্কা, এসব বাংকার হয়তো গুলির আঘাত ঠেকাতে পারবে, কিন্তু গোলার ভয়াবহতা থেকে তাদের রক্ষা করতে পারবে না।

পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্তে গোলাগুলি যেন নিত্যদিনের ঘটনা। সীমান্তবাসী গোলাগুলির শব্দ শুনেই বড় হয়েছে।

তবে এবারের পরিস্থিতিকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জটিল মনে করছেন উভয় দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষ। বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তের ৭৪৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে উত্তেজনা সবচেয়ে বেশি।

যুদ্ধের আবহ জিইয়ে রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে উভয় দেশের সরকার। শুক্রবার পাকিস্তান স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘আবদালি’র সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারত গতকাল শনিবার পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিস্তৃত সীমান্ত প্রায় তিন হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্ত ৭৪৪ কিলোমিটার। এছাড়াও এখানে রয়েছে মাত্র ৩৪ কিলোমিটারের একটি সরু সীমান্ত, যাকে সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়।

১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের তরফে একে ‘সিজফায়ার লাইন’ বা যুদ্ধবিরতি রেখা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও, সিমলা চুক্তির অধীনে উভয় দেশ একে নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসি হিসেবে জানে। জম্মু, সাম্বা ও কাঠুয়াসংলগ্ন সীমান্তকে ভারত ‘ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার’ এবং পাকিস্তান সেটাকে ‘ওয়ার্কিং বাউন্ডারি’ বলে অভিহিত করে।

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত সরকার পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। এনডিটিভির তথ্য অনুযায়ী, ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও জননীতির স্বার্থে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শুক্রবারের আদেশে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে উৎপাদিত বা সেখান থেকে রপ্তানি হওয়া সব পণ্যের প্রবেশ বন্ধ থাকবে এবং এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

পেহেলগামের হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ায় নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি অঞ্চলের মানুষ এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাড়ের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

আতঙ্কিত মানুষজন নিজেদের সুরক্ষার জন্য বাংকার সংস্কারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। টানা আট দিন ধরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলির কারণে সীমান্তবাসী বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতেই বাড়ির নিচে বাংকার তৈরির কাজ শুরু করেছেন পীরজাদা সৈয়দ নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, সীমান্তে গোলাগুলির ভয়াবহ পরিণতি তারা এর আগেও দেখেছেন।

তাই যেকোনো পরিস্থিতির জন্য ভূগর্ভস্থ বাংকার তৈরি করছেন, যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারবেন। জানা গেছে, অতিরিক্ত সামরিক তৎপরতা এবং রাতের আকাশে জেট বোমারু বিমানের আওয়াজ সীমান্তবাসীর মধ্যে গভীর ভয়ের সৃষ্টি করেছে।

২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে নিয়ন্ত্রণরেখায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে অভিযোগ রয়েছে, উভয় দেশের সেনাবাহিনী সেই চুক্তি পুরোপুরিভাবে মেনে চলতে পারেনি।

এরপর ২০২০ সালে লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে বিপুল সংখ্যক সেনা সরিয়ে লাদাখে স্থানান্তর করে ভারত।

এর কয়েক মাস পর, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে পূর্বের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য আরও একটি চুক্তি হয়। কিন্তু পেহেলগামের সাম্প্রতিক ঘটনার পর সেই চুক্তি আবারও ভেঙেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।