ঢাকা ০৯:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫

বিচার না পেলে ক্লাস নয়: কুয়েট শিক্ষকদের অনড় অবস্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০২:১৫:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • / ২৭২ বার পড়া হয়েছে

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) – শিক্ষাঙ্গন, জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। কিন্তু আজ সেখানে ভিন্ন চিত্র। ৭৪ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা এলেও, ক্লাসরুমগুলো শিক্ষকের অভাবে খাঁ খাঁ করছে।

এর মূলে রয়েছে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিদায়ী উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দ্বারা মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হন।

শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের নিয়ে চলে সাইবার বুলিংও। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকেরা ক্লাসে ফিরবেন না – এটাই তাঁদের অনড় সিদ্ধান্ত।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলে প্রথমে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় সব শিক্ষা কার্যক্রম। এরপর ৪ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, শিক্ষকদের অনীহার কারণে তা ভেস্তে গেছে।

১৮ এপ্রিল কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়, লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক ক্লাসে ফিরবেন না। এই লক্ষ্যে অধ্যাপক আবদুল্লা আল ফারুকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা লাঞ্ছনার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রতিবেদন জমা দেবে।

শিক্ষকেরা বলছেন, শুধু ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনাই নয়, পরবর্তী দুই মাস ধরেও কিছু শিক্ষার্থী তাঁদের নিয়ে কটূক্তি করেছে। তাই তাঁরা চান, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক হজরত আলী সবার সাথে আলোচনা করছেন, সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে বৈঠক করছেন তিনি।

এই অস্থিরতার শুরু ১৮ ফেব্রুয়ারি, যখন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ, সিন্ডিকেট সভায় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং আবাসিক হলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অবশেষে ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নতুন উপাচার্য সমাধানের চেষ্টা চালালেও, শিক্ষকদের অনড় অবস্থানের কারণে কুয়েটের একাডেমিক ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বিচার না পেলে ক্লাস নয়: কুয়েট শিক্ষকদের অনড় অবস্থান

আপডেট সময় ০২:১৫:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) – শিক্ষাঙ্গন, জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। কিন্তু আজ সেখানে ভিন্ন চিত্র। ৭৪ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা এলেও, ক্লাসরুমগুলো শিক্ষকের অভাবে খাঁ খাঁ করছে।

এর মূলে রয়েছে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিদায়ী উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দ্বারা মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হন।

শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের নিয়ে চলে সাইবার বুলিংও। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকেরা ক্লাসে ফিরবেন না – এটাই তাঁদের অনড় সিদ্ধান্ত।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলে প্রথমে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় সব শিক্ষা কার্যক্রম। এরপর ৪ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, শিক্ষকদের অনীহার কারণে তা ভেস্তে গেছে।

১৮ এপ্রিল কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়, লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক ক্লাসে ফিরবেন না। এই লক্ষ্যে অধ্যাপক আবদুল্লা আল ফারুকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা লাঞ্ছনার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রতিবেদন জমা দেবে।

শিক্ষকেরা বলছেন, শুধু ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনাই নয়, পরবর্তী দুই মাস ধরেও কিছু শিক্ষার্থী তাঁদের নিয়ে কটূক্তি করেছে। তাই তাঁরা চান, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক হজরত আলী সবার সাথে আলোচনা করছেন, সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে বৈঠক করছেন তিনি।

এই অস্থিরতার শুরু ১৮ ফেব্রুয়ারি, যখন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ, সিন্ডিকেট সভায় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং আবাসিক হলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অবশেষে ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নতুন উপাচার্য সমাধানের চেষ্টা চালালেও, শিক্ষকদের অনড় অবস্থানের কারণে কুয়েটের একাডেমিক ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।