গ্যাস সংকটে ধুঁকছে শিল্প! হুমকিতে ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ

- আপডেট সময় ১২:২৮:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
- / ২৭৭ বার পড়া হয়েছে
গ্যাস নেই তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার! ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে, দিশেহারা শিল্পোদ্যোক্তারা।
দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে হঠাৎ করেই গ্যাস সরবরাহে ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে চরম উদ্বিগ্ন শিল্পোদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকরা। নিরুপায় হয়ে এই খাতের চারটি শীর্ষ সংগঠন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করতে বাধ্য হয়েছে।
তাদের প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের আশ্বাসে গত কয়েক বছরে গ্যাসের দাম ৩০০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হলেও, গত দুই সপ্তাহ ধরে কারখানাগুলো মারাত্মক গ্যাস সংকটে ভুগছে। বহু কারখানার উৎপাদন আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, চলমান কার্যাদেশ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে গিয়ে রপ্তানিকারকদের আকাশপথে অতিরিক্ত ব্যয়ে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে, যা তাদের আর্থিক ক্ষতিকে আরও প্রকট করে তুলেছে।
শিল্পোদ্যোক্তাদের ভাষ্য, গ্যাস সংকটে শিল্প খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। গত এক বছরে বন্ধ হয়ে গেছে বহু কারখানা, কমেছে রপ্তানি আয়, থমকে গেছে নতুন বিনিয়োগ এবং ব্যাহত হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। তাদের আশঙ্কা, দ্রুত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না করা গেলে, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমার পাশাপাশি রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে এবং ডলার সংকট আরও তীব্র হবে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলবে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল ক্ষোভের সঙ্গে জানান, সংকট নিরসনে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার আবেদন করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে তারা গণমাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, একদিকে সরকার বিদেশি বিনিয়োগের কথা বলছে, অন্যদিকে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা জ্বালানি সংকটে কারখানা বন্ধ করে দেউলিয়া হওয়ার পথে। সরকারের জ্বালানি বিষয়ক পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ দেখছেন না তারা।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যেখানে গতকাল সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৬৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতির পরিমাণ ছিল ভয়াবহ – ১ হাজার ৫৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহকৃত গ্যাসের মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে এসেছে ১ হাজার ৮৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানি করা এলএনজি থেকে মাত্র ৮৩১ মিলিয়ন ঘনফুট।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফারুক হাসান মনে করেন, শিল্পে গ্যাস সংকট মোকাবিলায় দ্রুত নতুন কূপ খনন এবং এলএনজি ও এলপিজি আমদানি বাড়াতে হবে এবং এই প্রক্রিয়াকে নিয়মিত করতে হবে। প্রয়োজনে জ্বালানি আমদানির জন্য রপ্তানি আয়ের একটি অংশ নির্দিষ্টভাবে বরাদ্দ রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।
বিজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, এই সংকট উত্তরণে জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বিইআরসি, পেট্রোবাংলা ও তিতাসের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা রূপরেখা দেওয়া হয়নি। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়াও, সিস্টেম লস কমানো, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা পরিহার করে সব পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
হঠাৎ গ্যাস সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন বাড়াতে শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তিতাস নেটওয়ার্কেই শিল্প খাতে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমেছে এবং প্রক্রিয়াকরণের সময় প্রায় ২০ শতাংশ গ্যাস অপচয় হচ্ছে।
বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিটিএলএমইএর অন্তর্ভুক্ত টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানাগুলো দেশের রপ্তানিতে প্রায় ৮৫ শতাংশ অবদান রাখে। গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত হলেও, বাস্তবে তা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বিনিয়োগ এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। সংকট অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, রপ্তানি কমবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও দুর্বল হবে এবং সরকারের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টাও বাধাগ্রস্ত হবে।