ঢাকা ১১:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

সংঘাত বাড়লে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষতি বেশি, বলছে মুডিস

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০১:৩৪:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
  • / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে, যা পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস সম্প্রতি জানিয়েছে, যখন পাকিস্তানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সামান্য ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছিল, ঠিক তখনই এই সামরিক সংঘাত দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারে।

তবে, সংস্থাটি মনে করে যে এই পরিস্থিতিতে ভারতের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মুডিস তাদের বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছে, দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং সরকারের চলমান আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করবে।

এর ফলে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য পাকিস্তান সরকার যে কঠিন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তা ভেস্তে যেতে পারে।

যদিও মুডিস স্বীকার করেছে যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির কারণে পাকিস্তানের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, যেমন – প্রবৃদ্ধির সামান্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উন্নতি।

এমনকি এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেও আইএমএফ পাকিস্তানকে তাদের ঋণ কর্মসূচির আওতায় আরও ১০০ কোটি ডলার ছাড় করেছে।

তবে, মুডিসের মূল উদ্বেগ হলো, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা আরও বৃদ্ধি পায়, তাহলে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ পাওয়া পাকিস্তানের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

এর ফলে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর পুনরায় চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা গত কয়েক মাসে সামান্য উন্নত হলেও এখনও স্থিতিশীলতার বাইরে রয়েছে।

অন্যদিকে, ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদের পানি বণ্টন চুক্তি ভারত স্থগিত করলে পাকিস্তানে জল সরবরাহ কমে যাবে, যা দেশটির কৃষি উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মুডিস সতর্ক করেছে।

ভারতের ক্ষেত্রে চিত্রটি ভিন্ন। মুডিস মনে করে, দেশটির সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে। সংঘাত দীর্ঘায়িত হলেও, অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সরকারি বিনিয়োগের কারণে ভারত উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হবে। মুডিসের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের তেমন বড় কোনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক না থাকায়, এই আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণে ভারতের অর্থনীতিতে তেমন উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না।

তবে, সংঘাত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা দেশটির আর্থিক প্রবৃদ্ধির ওপর সামান্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে মুডিস মনে করে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বজায় থাকবে এবং সীমিত পরিসরে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে তা বৃহৎ আকারের যুদ্ধে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ছিল খুবই কম এবং ২০২৪ সালে তা সামান্য বেড়ে ২.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২০২৫ সালে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের অর্থনীতি আবারও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সামরিক সংঘাতের প্রভাবে পাকিস্তানি রুপির দরপতন হয়েছে এবং শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যা দেশটির জন্য নতুন করে অর্থায়ন জোগাড় করা আরও কঠিন করে তুলবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

সংঘাত বাড়লে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষতি বেশি, বলছে মুডিস

আপডেট সময় ০১:৩৪:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে, যা পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস সম্প্রতি জানিয়েছে, যখন পাকিস্তানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সামান্য ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছিল, ঠিক তখনই এই সামরিক সংঘাত দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারে।

তবে, সংস্থাটি মনে করে যে এই পরিস্থিতিতে ভারতের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মুডিস তাদের বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছে, দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং সরকারের চলমান আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করবে।

এর ফলে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য পাকিস্তান সরকার যে কঠিন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তা ভেস্তে যেতে পারে।

যদিও মুডিস স্বীকার করেছে যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির কারণে পাকিস্তানের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, যেমন – প্রবৃদ্ধির সামান্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উন্নতি।

এমনকি এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেও আইএমএফ পাকিস্তানকে তাদের ঋণ কর্মসূচির আওতায় আরও ১০০ কোটি ডলার ছাড় করেছে।

তবে, মুডিসের মূল উদ্বেগ হলো, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা আরও বৃদ্ধি পায়, তাহলে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ পাওয়া পাকিস্তানের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

এর ফলে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর পুনরায় চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা গত কয়েক মাসে সামান্য উন্নত হলেও এখনও স্থিতিশীলতার বাইরে রয়েছে।

অন্যদিকে, ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদের পানি বণ্টন চুক্তি ভারত স্থগিত করলে পাকিস্তানে জল সরবরাহ কমে যাবে, যা দেশটির কৃষি উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মুডিস সতর্ক করেছে।

ভারতের ক্ষেত্রে চিত্রটি ভিন্ন। মুডিস মনে করে, দেশটির সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে। সংঘাত দীর্ঘায়িত হলেও, অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সরকারি বিনিয়োগের কারণে ভারত উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হবে। মুডিসের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের তেমন বড় কোনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক না থাকায়, এই আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণে ভারতের অর্থনীতিতে তেমন উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না।

তবে, সংঘাত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা দেশটির আর্থিক প্রবৃদ্ধির ওপর সামান্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে মুডিস মনে করে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বজায় থাকবে এবং সীমিত পরিসরে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে তা বৃহৎ আকারের যুদ্ধে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ছিল খুবই কম এবং ২০২৪ সালে তা সামান্য বেড়ে ২.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২০২৫ সালে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের অর্থনীতি আবারও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সামরিক সংঘাতের প্রভাবে পাকিস্তানি রুপির দরপতন হয়েছে এবং শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যা দেশটির জন্য নতুন করে অর্থায়ন জোগাড় করা আরও কঠিন করে তুলবে।