ঢাকা ১০:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

এখন থেকে ব্যাংকের মালিকানা হস্তান্তর করতে পারবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১০:০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে

দেশের আর্থিক খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। সরকার ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করার মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোর মালিকানা গ্রহণ এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও ক্ষমতা লাভ করেছে।

এই নতুন আইন ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় এক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই অধ্যাদেশের অধীনে, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সাময়িকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর মালিকানা নিতে পারবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি মালিকানাধীন যেকোনো কোম্পানিকে দুর্বল ব্যাংকের শেয়ার হস্তান্তরের নির্দেশ দিতে পারবে।

এমনকি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ধরনের ব্যাংকের সম্পদ, দায় এবং শেয়ার তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তরের ক্ষমতাও লাভ করেছে।

দুর্বল ব্যাংক নিষ্পত্তির ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি পৃথক তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিলে সরকার ছাড়াও আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও আইডিবির মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও অর্থায়ন বা ঋণ নেওয়া সম্ভব হবে।

ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশের অধীনে দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সকল ক্ষমতা প্রয়োগ এবং অন্যান্য দায়িত্ব পালনের কর্তৃত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর। এই কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি নতুন বিভাগ খোলা হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারভিশন বিভাগগুলো নিয়মিতভাবে ব্যাংক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার হালনাগাদ তথ্য এই বিভাগে সরবরাহ করবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে, নবগঠিত বিভাগ দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ‘আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা’ বা পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক নীতিমালা জারি করে। এই নীতিমালার আওতায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হবে।

ক্যাটেগরি-৪ এ থাকা ব্যাংকগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে এই নতুন অধ্যাদেশের অধীনে। ক্যাটেগরি-৩ এ থাকা ব্যাংকগুলোর ওপর বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

অধ্যাদেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো আর্থিক ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যাংকের স্বাভাবিক লেনদেন বজায় রাখা। কোনো অকার্যকর ব্যাংক যাতে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হতে পারে, তা নিশ্চিত করাই এই আইনের লক্ষ্য।

কোনো ব্যাংক রেজোল্যুশন বা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করলে, বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংককে সর্বোচ্চ দুই মাস সময় দেবে এবং সম্ভাব্য পদক্ষেপের প্রস্তাবনা চাইবে।

ব্যাংকের পদক্ষেপ সন্তোষজনক না হলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি প্রতিবন্ধকতা দূর করার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। এক্ষেত্রে, ব্যাংকের কার্যক্রম সীমিত করা, আন্তঃগ্রুপ সহায়তা চুক্তি এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সেবা চুক্তির মতো নির্দেশনাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এখন থেকে ব্যাংকের মালিকানা হস্তান্তর করতে পারবে সরকার

আপডেট সময় ১০:০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

দেশের আর্থিক খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। সরকার ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করার মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোর মালিকানা গ্রহণ এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও ক্ষমতা লাভ করেছে।

এই নতুন আইন ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় এক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই অধ্যাদেশের অধীনে, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সাময়িকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর মালিকানা নিতে পারবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি মালিকানাধীন যেকোনো কোম্পানিকে দুর্বল ব্যাংকের শেয়ার হস্তান্তরের নির্দেশ দিতে পারবে।

এমনকি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ধরনের ব্যাংকের সম্পদ, দায় এবং শেয়ার তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তরের ক্ষমতাও লাভ করেছে।

দুর্বল ব্যাংক নিষ্পত্তির ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি পৃথক তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিলে সরকার ছাড়াও আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও আইডিবির মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও অর্থায়ন বা ঋণ নেওয়া সম্ভব হবে।

ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশের অধীনে দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সকল ক্ষমতা প্রয়োগ এবং অন্যান্য দায়িত্ব পালনের কর্তৃত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর। এই কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি নতুন বিভাগ খোলা হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারভিশন বিভাগগুলো নিয়মিতভাবে ব্যাংক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার হালনাগাদ তথ্য এই বিভাগে সরবরাহ করবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে, নবগঠিত বিভাগ দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ‘আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা’ বা পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক নীতিমালা জারি করে। এই নীতিমালার আওতায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হবে।

ক্যাটেগরি-৪ এ থাকা ব্যাংকগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে এই নতুন অধ্যাদেশের অধীনে। ক্যাটেগরি-৩ এ থাকা ব্যাংকগুলোর ওপর বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

অধ্যাদেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো আর্থিক ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যাংকের স্বাভাবিক লেনদেন বজায় রাখা। কোনো অকার্যকর ব্যাংক যাতে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হতে পারে, তা নিশ্চিত করাই এই আইনের লক্ষ্য।

কোনো ব্যাংক রেজোল্যুশন বা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করলে, বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংককে সর্বোচ্চ দুই মাস সময় দেবে এবং সম্ভাব্য পদক্ষেপের প্রস্তাবনা চাইবে।

ব্যাংকের পদক্ষেপ সন্তোষজনক না হলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি প্রতিবন্ধকতা দূর করার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। এক্ষেত্রে, ব্যাংকের কার্যক্রম সীমিত করা, আন্তঃগ্রুপ সহায়তা চুক্তি এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সেবা চুক্তির মতো নির্দেশনাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।