ঢাকা ০৯:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
তীব্র গরমে হাঁসফাঁস:

ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি খুলনার কারাগারগুলোতে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০১:৩৫:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে

খুলনা বিভাগের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি থাকায় তীব্র গরমে বন্দিদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের ১০টি কারাগারে মোট ধারণক্ষমতা ৫,০৬৯ জন হলেও, গত রবিবার (১১ মে) পর্যন্ত সেখানে হাজতি ও কয়েদি মিলিয়ে ছিলেন ৭,০৯৫ জন।

অর্থাৎ, কারাগারগুলোতে প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি বন্দি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অসহনীয় গরমে বন্দিরা হাঁসফাঁস করছেন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগারগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফ্যান থাকলেও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে তা বন্দিদের জন্য যথেষ্ট নয়। অনেক ফ্যান একটানা চলার কারণে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফ্যান ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে।

বন্দিদের গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়ার এবং কায়িক শ্রমে নিয়োজিতদের বিশ্রামের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, কারাগারে খাবার স্যালাইন সরবরাহের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. জান্নাত উল ফরহাদ জানান, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দির কারণেই মূলত এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারাগারের ভেতরে পর্যাপ্ত গাছপালা থাকায় বন্দিদেরকে গাছের ছায়ায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কায়িক শ্রমের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন এবং নিয়মিত পানি সরবরাহের মাধ্যমে বন্দিদের একাধিকবার গোসলের সুযোগ নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি, স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন সরবরাহেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খুলনা বিভাগের ১০টি কারাগারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট ৫,০৬৯ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে রবিবার বন্দি ছিলেন ৭,০৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ বন্দীর সংখ্যা ৬,৮২৬ জন এবং মহিলা বন্দি ছিলেন ২৬৯ জন।

খুলনা জেলা কারাগারের সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান জানান, তাদের কারাগারে ৫০০ জন বন্দি ধারণের ক্ষমতা থাকলেও রবিবার সেখানে ১৪৫৯ জন বন্দি ছিলেন, যার মধ্যে ৫৮ জন মহিলা এবং দুটি শিশু রয়েছে।

মেহেরপুর কারা সুপার দেবদুলাল কর্মকার জানান, তাদের কারাগারে ৩৫০ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে ২৭৮ জন বন্দি ছিলেন, যার মধ্যে ৯ জন মহিলা।

চুয়াডাঙ্গা কারাগারের জেলার মো. ফকির উদ্দিন জানান, ৫২১ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে সেখানে ৪১৯ জন বন্দি ছিলেন, যার মধ্যে ৩২ জন মহিলা ও একটি শিশু।

বাগেরহাট কারাগারের জেলার মো. আল আমিন জানান, ৫৬৭ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে তাদের কারাগারে ৬৯৩ জন বন্দি ছিলেন, যার মধ্যে ১১ জন মহিলা।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. শরিফুল আলম জানান, ১,৬৯৫ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে সেখানে ১,৪৪৩ জন বন্দি ছিলেন, যার মধ্যে ৬৯ জন মহিলা ও তিনটি শিশু রয়েছে।

তবে, খুলনা বিভাগের কারা উপ মহাপরিদর্শক অসীম কান্ত পাল দাবি করেন, কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি থাকলেও তীব্র গরমে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

কারণ হিসেবে তিনি সেখানকার পর্যাপ্ত গাছপালা, সার্বক্ষণিক পানির সরবরাহ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

তীব্র গরমে হাঁসফাঁস:

ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি খুলনার কারাগারগুলোতে

আপডেট সময় ০১:৩৫:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

খুলনা বিভাগের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি থাকায় তীব্র গরমে বন্দিদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের ১০টি কারাগারে মোট ধারণক্ষমতা ৫,০৬৯ জন হলেও, গত রবিবার (১১ মে) পর্যন্ত সেখানে হাজতি ও কয়েদি মিলিয়ে ছিলেন ৭,০৯৫ জন।

অর্থাৎ, কারাগারগুলোতে প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি বন্দি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অসহনীয় গরমে বন্দিরা হাঁসফাঁস করছেন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগারগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফ্যান থাকলেও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে তা বন্দিদের জন্য যথেষ্ট নয়। অনেক ফ্যান একটানা চলার কারণে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফ্যান ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে।

বন্দিদের গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়ার এবং কায়িক শ্রমে নিয়োজিতদের বিশ্রামের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, কারাগারে খাবার স্যালাইন সরবরাহের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. জান্নাত উল ফরহাদ জানান, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দির কারণেই মূলত এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারাগারের ভেতরে পর্যাপ্ত গাছপালা থাকায় বন্দিদেরকে গাছের ছায়ায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কায়িক শ্রমের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন এবং নিয়মিত পানি সরবরাহের মাধ্যমে বন্দিদের একাধিকবার গোসলের সুযোগ নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি, স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন সরবরাহেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খুলনা বিভাগের ১০টি কারাগারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট ৫,০৬৯ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে রবিবার বন্দি ছিলেন ৭,০৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ বন্দীর সংখ্যা ৬,৮২৬ জন এবং মহিলা বন্দি ছিলেন ২৬৯ জন।

খুলনা জেলা কারাগারের সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান জানান, তাদের কারাগারে ৫০০ জন বন্দি ধারণের ক্ষমতা থাকলেও রবিবার সেখানে ১৪৫৯ জন বন্দি ছিলেন, যার মধ্যে ৫৮ জন মহিলা এবং দুটি শিশু রয়েছে।

মেহেরপুর কারা সুপার দেবদুলাল কর্মকার জানান, তাদের কারাগারে ৩৫০ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে ২৭৮ জন বন্দি ছিলেন, যার মধ্যে ৯ জন মহিলা।

চুয়াডাঙ্গা কারাগারের জেলার মো. ফকির উদ্দিন জানান, ৫২১ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে সেখানে ৪১৯ জন বন্দি ছিলেন, যার মধ্যে ৩২ জন মহিলা ও একটি শিশু।

বাগেরহাট কারাগারের জেলার মো. আল আমিন জানান, ৫৬৭ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে তাদের কারাগারে ৬৯৩ জন বন্দি ছিলেন, যার মধ্যে ১১ জন মহিলা।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. শরিফুল আলম জানান, ১,৬৯৫ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে সেখানে ১,৪৪৩ জন বন্দি ছিলেন, যার মধ্যে ৬৯ জন মহিলা ও তিনটি শিশু রয়েছে।

তবে, খুলনা বিভাগের কারা উপ মহাপরিদর্শক অসীম কান্ত পাল দাবি করেন, কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি থাকলেও তীব্র গরমে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

কারণ হিসেবে তিনি সেখানকার পর্যাপ্ত গাছপালা, সার্বক্ষণিক পানির সরবরাহ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন।