স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞা:
ভারতের বাজার হারানোর শঙ্কায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা

- আপডেট সময় ০১:১০:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
- / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে
সম্প্রতি ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর ব্যবহার করে বেশ কিছু পণ্য আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য এবং প্লাস্টিকের মতো প্রায় সাত ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় রবিবার (১৮ মে), যখন এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পরপরই সীমান্তগুলোতে অনেক বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাক আটকে যায়।
এতে চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের রপ্তানিকারকরা। তাদের আশঙ্কা, পরিবহন খরচ পাঁচগুণ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় আদৌ এই বাজারে টিকে থাকা সম্ভব হবে কিনা।
রপ্তানিকারকদের মতে, স্থলবন্দর বন্ধ হয়ে গেলে ভারতের বাজারে পণ্য রপ্তানি প্রায় বন্ধের মুখে পড়বে। কারণ, বিকল্প হিসেবে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন একদিকে যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনই বহুগুণ বেশি ব্যয়বহুল।
সমুদ্রপথে প্রথমে পণ্য কলকাতা বা মুম্বাই বন্দরে খালাস করতে হবে, এরপর সেখান থেকে স্থলপথে পৌঁছাতে হবে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ভারতের মূল ভূখণ্ডে কিছু পণ্য পাঠানো গেলেও, সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য রপ্তানি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ, এই অঞ্চলের সাথে স্থলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে সহজ এবং সাশ্রয়ী ছিল।
বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, এতদিন তারা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পাঠানোর জন্য মূলত স্থলবন্দরই ব্যবহার করতেন। সমুদ্রপথ তাদের কাছে অপরিচিত ছিল, কারণ এতে পরিবহন খরচ প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে যায়।
তাদের হিসাব অনুযায়ী, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পাঠাতে হলে প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সমুদ্রপথে কলকাতা বন্দরে পণ্য নিয়ে যেতে হবে। এরপর পুরো বাংলাদেশের সীমান্ত ঘুরে আসাম, মেঘালয়, করিমগঞ্জ ও আগরতলার মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। এই দীর্ঘ এবং জটিল পথে পরিবহন খরচ আকাশ ছোঁবে।
মূলত সেভেন সিস্টার্সের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা ছিল ব্যাপক, যা ভারতীয় কোম্পানিগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এর প্রধান কারণ ছিল তুলনামূলক কম পরিবহন খরচ।
রপ্তানিকারকরা আরও জানান, এতদিন তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, মৌলভীবাজারের চাতলাপুর, সিলেটের শেওলা এবং তামাবিলের মতো ছয়টি স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতে পণ্য পাঠাতেন। এই বন্দরগুলো এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভারত বর্তমানে কেবল কলকাতা ও মুম্বাই সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির অনুমতি দিচ্ছে, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য রপ্তানির জন্য কার্যত অকার্যকর।
এতদিন একটি ২০ ফুটের কার্গো স্থলপথে সেভেন সিস্টার্সে পাঠাতে খরচ হতো ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এখন একই পরিমাণ পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত নিতে একই ভাড়া লাগবে। এরপর জাহাজ ভাড়া এবং কলকাতা থেকে পুনরায় আসাম, মেঘালয় বা আগরতলায় পণ্য পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ টাকা গুনতে হবে।