ভারতের আকস্মিক আমদানি নীতিতে ঝুঁকিতে কোন কোন শিল্প?

- আপডেট সময় ০৯:৩১:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
- / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে
প্রতিবেশী দেশ ভারতের নতুন আমদানি নীতি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য রপ্তানিতে হঠাৎ করে বিধিনিষেধ আরোপ করায় বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো চরম ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রামের কালুরঘাটের বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের কথাই ধরুন। দেড় বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি স্থলপথে ভারতের তিনটি রাজ্যে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে আসছে। তাদের উৎপাদিত কুকিজ, টোস্ট আর সল্টেড বিস্কুটের একটা বড় বাজার ছিল আসাম, ত্রিপুরা আর কলকাতায়।
কিন্তু নতুন বিধিনিষেধের কারণে এখন যদি কলকাতা হয়ে ঘুরপথে পণ্য পাঠাতে হয়, তাহলে শুধুমাত্র পরিবহন খরচই বেড়ে যাবে প্রায় এক লাখ টাকা! এই বাড়তি খরচ ক্রেতাদের পক্ষে বহন করা প্রায় অসম্ভব। আর রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়াও তাদের জন্য কঠিন।
বিএসপি ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত কুমার দাস জানিয়েছেন, ভারতের এই বিধিনিষেধের আগেই তারা ৪২ হাজার কার্টনের খাদ্যপণ্যের একটি বড় অর্ডার পেয়েছিলেন এবং সেই অনুযায়ী উৎপাদনও সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই পণ্যগুলো আর রপ্তানি করা যাচ্ছে না।
শুধু বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসই নয়, ভারতের এই নতুন আমদানি নীতির কারণে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী ছোট ও মাঝারি আকারের অনেক প্রতিষ্ঠানই বেশি ক্ষতির শিকার হবে।
কারণ, সেভেন সিস্টার খ্যাত উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যে এই পণ্যগুলোর চাহিদা বেশ ভালো। এছাড়াও, তৈরি পোশাক শিল্পও প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা।
বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, স্থলপথে পণ্য পরিবহনের সহজ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পক্ষে বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
বড় শিল্পগোষ্ঠী হয়তো এই ধাক্কা সামলে নিতে পারবে, কিন্তু ছোট ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। হাতে থাকা ক্রয়াদেশের পণ্য সময়মতো পাঠাতে না পারলে বড় অঙ্কের লোকসান গুণতে হবে। তাই ব্যবসায়ীরা দ্রুত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, এই সংকট মোকাবিলায় আজ মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকে পররাষ্ট্র ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।
ভারতের নতুন এই বিধিনিষেধ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে শুধু নভো সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে তৈরি পোশাক আমদানি করা যাবে। এছাড়া আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ফল, ফলের পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা এবং আসবাব রপ্তানি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে প্রায় ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল স্থলপথের মাধ্যমে।
এই নতুন নীতি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারতে রপ্তানিনির্ভর ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।