কাশ্মীর হামলার জের: ৭১-এর পর এই প্রথম ভারতজুড়ে নিরাপত্তা মহড়া

- আপডেট সময় ০১:০৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
- / ২৫২ বার পড়া হয়েছে
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২শে এপ্রিলের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, ভারতীয় কেন্দ্র সরকার এক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।
বুধবার, ৭ই মে থেকে কেন্দ্র সরকার একাধিক রাজ্যকে ‘শত্রুপক্ষের হামলার পরিস্থিতিতে কার্যকর নাগরিক প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে’ দেশব্যাপী নিরাপত্তা মহড়া পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে।
এই ধরনের ব্যাপকভিত্তিক মহড়ার নির্দেশ প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর দেওয়া হলো। এর আগে, ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যখন দুই ফ্রন্টে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, তখন শেষবার এই ধরনের সর্বাত্মক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে।
১৯৭১ সালের সেই মহড়ার সময় সমগ্র ভারতে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এরপর এই প্রথমবার ভারত সরকার একই ধরনের প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপের নির্দেশ দিল, যা ভারত-পাকিস্তান বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে গভীর তাৎপর্য বহন করে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্যগুলোকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি হলে নাগরিকদের কী করতে হবে, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। এই মহড়ার অংশ হিসেবে রাজ্যগুলোকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বাজানো: আকস্মিক বিমান হামলা থেকে নাগরিকদের সতর্ক করার জন্য সাইরেন বাজানোর অনুশীলন করা হবে।
- বেসামরিক নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ: শত্রু হামলার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
- বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন বা ব্ল্যাকআউটের প্রস্তুতি: আকস্মিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হলে কী করণীয়, সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তার মহড়া চালানো হবে।
- গুরুত্বপূর্ণ কারখানা ও স্থাপনার সুরক্ষা: যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কারখানা এবং কৌশলগত স্থাপনাগুলোকে দ্রুত ছদ্মবেশে আনা অথবা সেগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
- জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা: দুর্যোগ বা হামলার সময় সাধারণ মানুষকে দ্রুত এবং নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হালনাগাদ করা এবং সেই অনুযায়ী মহড়া পরিচালনা করা হবে।
এই মহড়ার অংশ হিসেবে, পাঞ্জাবের ফিরোজাবাদে গত সোমবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেনা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগকে পূর্বনির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার জন্য অনুরোধ করেছিল।
এ বিষয়ে এক ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্মকর্তা জানান, এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির হুমকির প্রেক্ষাপটে ব্ল্যাকআউট পদ্ধতি কতটা প্রস্তুত এবং কার্যকর, তা নিশ্চিত করা।
পেহেলগামে জঙ্গিদের গুলিতে ২৬ জন পর্যটকের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, পাকিস্তান টানা ১১ রাত ধরে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতীয় পোস্টে নিয়মিতভাবে গুলি বর্ষণ করে চলেছে। ভারতও পাকিস্তানের এই লাগাতার সীমান্ত লঙ্ঘনের কঠোর জবাব দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। কাশ্মীরে হামলার বদলা নিতে তিনি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই, এবার ভারতজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে ৭ই মে নিরাপত্তা মহড়া পরিচালনার এই নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারি করা হলো, যা দেশের নিরাপত্তা প্রস্তুতিকে এক নতুন স্তরে নিয়ে গেল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।