কক্সবাজারে যুবক খুনের ঘটনায় এনসিপি নেতাসহ তিনজন কারাগারে

- আপডেট সময় ০৩:৫৬:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
- / ২৭৪ বার পড়া হয়েছে
কক্সবাজার সদরে এবি পার্টির নেতার হ্যাচারিতে আলী আকবর (২৮) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় আদালত এনসিপি নেতাসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠান। এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার (৬ মে) রাতে মশাল মিছিলসহ বিক্ষোভ করেছেন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন। নিহত আলী আকবরের স্ত্রী এলমুন্নাহার বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন।
মামলায় হ্যাচারি মালিক জাহাঙ্গীর কাশেম, তার ছেলে রায়হান কাশেম, ভাই তানভীর কাশেম ও ঘেরের ম্যানেজার আনোয়ারকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে রায়হান কাশেম, মিজান ও আনোয়ার হোসাইন কারাগারে রয়েছেন।
কারাগারে থাকা রায়হান কাসেম জুলাই অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক। সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
পুলিশ হেফাজতে থাকা হ্যাচারি পরিচালক রায়হান কাসেমকে মামলা নথিভুক্ত হওয়ার আগে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। কক্সবাজার সদর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আখতার জাভেদের আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করে। মিজান ও হোসাইন নামের আরও দুজনকেও সোমবার (৫ মে) একইভাবে কারাগারে নেওয়া হয়।
এদিকে রায়হানকে আদালতে তোলা হলে মঙ্গলবার তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন কক্সবাজার জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম, অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম সিদ্দীকী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাওহিদুল আনোয়ার ও অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক খান কায়সার।
অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক খান কায়সার জানান, তারা এ ঘটনায় রায়হানের সম্পৃক্ততা না থাকার বিষয়ে নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন। কিন্তু আদালত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে কারাগারে পাঠান। তবে আদালত রায়হানের সুচিকিৎসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে রায়হান কাশেমের মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজারে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে তার জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধারা। শহরের কালুর দোকান থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে এসে মিলিত হয়। এ সময় তারা সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করেন। সেখানে পুলিশের সঙ্গে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, জুলাই বিপ্লবের সম্মুখ সারির যোদ্ধা রায়হান কাশেমের ওপর বর্বরোচিত হামলা হয়েছে এবং তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
রায়হান কাশেমের মুক্তির আগ পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে সংগঠক রবিউল বলেন, হ্যাচারিতে যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে আমরা তার জন্য শোকাহত। তবে নির্দোষ রায়হানের জামিন আবেদনের পরও তা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তাই আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি।
এ সময় বিক্ষুব্ধরা প্রশাসনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, এ শহরে যুবলীগ নেতা মোনাফের মতো মানুষেরা প্রকাশ্যে মিছিল করতে পারে, তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় না। তবে রায়হান কাশেমের মতো বিপ্লবীদের কেন বিনা অপরাধে গ্রেফতার করা হবে?
খুরুশকুলের কুলিয়াপাড়া ও মাঝির ঘাট এলাকার ‘আল্লাওয়ালা হ্যাচারি’ নামে মৎস্য ঘেরে রবিবার (৫ মে) রাত ১০ টার দিকে আলী আকবর নামের ওই যুবক নিহত হন। নিহত আলী আকবর খুরুশকুলের কুলিয়া পাড়ার মৃত দানু মিয়ার ছেলে।
ঘটনার পর হ্যাচারির পরিচালক রাইয়ান কাশেম গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, নিহত যুবক তাদের ঘেরে মাছ চুরি করতে এসে ধরা পড়ে। এ সময় ওই যুবক নৈশপ্রহরীকে দা দিয়ে আঘাত করতে চেষ্টা করলে আত্মরক্ষার্থে পাল্টা লাঠির আঘাত করা হয়৷ এতে আকবর মারা যায়।
তবে এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের দাবি, আকবর এলাকার একটি বিয়ে যাবার কালে তাকে ডেকে নিয়ে এসে চুরির অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনার পর ওই হ্যাচারিতে এলাকাবাসী ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে তারা হ্যাচারির পরিচালক রাইয়ান কাসেমের ওপরও চড়াও হয়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত হ্যাচারিতে গিয়ে রাইয়ানকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় ও মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে তাদের তত্ত্বাবধানে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নিয়ে যায়।
নিহত আলী আকবরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার (৫ মে) বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাবুক্তগীন মাহমুদ শাহেল জানান, নিহত যুবকের মাথায় ও চোখে গুরুতর জখমের চিহ্ন রয়েছে। হাত পেছনে বাঁধা ছিল। কীভাবে কী কারণে মৃত্যু হয়েছে তা বিস্তারিত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে উঠে আসবে বলে আশা করা যায়।