ঢাকা ১০:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

আমেরিকায় ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ বিক্ষোভ

ঢাকা প্রেস ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০২:২০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
  • / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বজুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মার্কিন রাজনীতি। একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ, অন্যদিকে দেশজুড়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ। এই দুই বিপরীত চিত্র মার্কিন গণতন্ত্রের এক জটিল পরিস্থিতি তুলে ধরছে।

গত শনিবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসি সাক্ষী ছিল এক বিরল সামরিক কুচকাওয়াজের। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মদিন এবং একইসঙ্গে মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এই আয়োজন করা হয়েছিল।

হাজারো সেনাসদস্য, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান এবং ব্যান্ড দলের অংশগ্রহণে এই কুচকাওয়াজ ছিল এক বিশাল সামরিক শক্তির প্রদর্শনী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং সৈনিকদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের সৈনিকরা কখনও হার মানে না, কখনও আত্মসমর্পণ করে না, তারা লড়াই করে, জয় ছিনিয়ে আনে।”

তবে এই আয়োজন নিয়ে সমালোচনা কম নয়। অনেক সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এই প্যারেডকে ট্রাম্পের ‘দামি ইগো প্রজেক্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। মার্কিন সেনাবাহিনীর হিসেব অনুযায়ী, এই প্যারেডের পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৪৫ মিলিয়ন ডলার, যা নিয়ে বিতর্ক আরও তুঙ্গে।

যখন ওয়াশিংটনে সামরিক মহড়া চলছিল, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শুরু হয় ব্যাপক বিক্ষোভ। “নো কিংস” বা “কোনো রাজা নয়” নামের একটি সংগঠন এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। আন্দোলনকারীদের মতে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী আচরণের অভিযোগ থেকেই এই নামকরণ করা হয়েছে। তাদের মূল বক্তব্য হলো— ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং একজন রাজা হিসেবে আচরণ করছেন।

নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেল্ফিয়া এবং হিউস্টনের মতো বড় শহরগুলোতে জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। আইনপ্রণেতা, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ও অধিকারকর্মীরা এসব সমাবেশে বক্তব্য দেন।

বিক্ষোভের সবচেয়ে বড় এবং উত্তেজনাপূর্ণ অংশ দেখা গেছে লস অ্যাঞ্জেলেসে। অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে সেখানে বেশ কয়েকদিন ধরেই বিক্ষোভ চলছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় রক্ষীবাহিনী (ন্যাশনাল গার্ড) মোতায়েন করেন, যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম এর বিরোধিতা করেছিলেন।

বিক্ষোভের সময় ফেডারেল বিল্ডিংয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ন্যাশনাল গার্ডের সংঘর্ষও হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। ‘ব্রাউন বেরেটস’ নামের একটি নাগরিক অধিকার সংগঠনের সদস্য হোসে অ্যাজেতক্লা এই পদক্ষেপকে “শুধু কঠোর নয়, নিষ্ঠুর” বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এই ব্যাপক বিক্ষোভ সত্ত্বেও, মার্কিন জনমত কিন্তু এখনো বিভক্ত। সিবিএস/ইউগভ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারের নীতিকে ৫৪ শতাংশ আমেরিকান সমর্থন করেন, যেখানে ৪৬ শতাংশ এর বিরোধিতা করেছেন।

৪২ শতাংশ নাগরিক মনে করেন এই নীতিতে তারা নিজেদের আরও নিরাপদ বোধ করেন এবং ৫৩ শতাংশ মনে করেন, ট্রাম্প মূলত বিপজ্জনক অপরাধীদের লক্ষ্য করেই পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আমেরিকায় ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ বিক্ষোভ

আপডেট সময় ০২:২০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

বিশ্বজুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মার্কিন রাজনীতি। একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ, অন্যদিকে দেশজুড়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ। এই দুই বিপরীত চিত্র মার্কিন গণতন্ত্রের এক জটিল পরিস্থিতি তুলে ধরছে।

গত শনিবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসি সাক্ষী ছিল এক বিরল সামরিক কুচকাওয়াজের। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মদিন এবং একইসঙ্গে মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এই আয়োজন করা হয়েছিল।

হাজারো সেনাসদস্য, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান এবং ব্যান্ড দলের অংশগ্রহণে এই কুচকাওয়াজ ছিল এক বিশাল সামরিক শক্তির প্রদর্শনী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং সৈনিকদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের সৈনিকরা কখনও হার মানে না, কখনও আত্মসমর্পণ করে না, তারা লড়াই করে, জয় ছিনিয়ে আনে।”

তবে এই আয়োজন নিয়ে সমালোচনা কম নয়। অনেক সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এই প্যারেডকে ট্রাম্পের ‘দামি ইগো প্রজেক্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। মার্কিন সেনাবাহিনীর হিসেব অনুযায়ী, এই প্যারেডের পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৪৫ মিলিয়ন ডলার, যা নিয়ে বিতর্ক আরও তুঙ্গে।

যখন ওয়াশিংটনে সামরিক মহড়া চলছিল, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শুরু হয় ব্যাপক বিক্ষোভ। “নো কিংস” বা “কোনো রাজা নয়” নামের একটি সংগঠন এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। আন্দোলনকারীদের মতে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী আচরণের অভিযোগ থেকেই এই নামকরণ করা হয়েছে। তাদের মূল বক্তব্য হলো— ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং একজন রাজা হিসেবে আচরণ করছেন।

নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেল্ফিয়া এবং হিউস্টনের মতো বড় শহরগুলোতে জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। আইনপ্রণেতা, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ও অধিকারকর্মীরা এসব সমাবেশে বক্তব্য দেন।

বিক্ষোভের সবচেয়ে বড় এবং উত্তেজনাপূর্ণ অংশ দেখা গেছে লস অ্যাঞ্জেলেসে। অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে সেখানে বেশ কয়েকদিন ধরেই বিক্ষোভ চলছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় রক্ষীবাহিনী (ন্যাশনাল গার্ড) মোতায়েন করেন, যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম এর বিরোধিতা করেছিলেন।

বিক্ষোভের সময় ফেডারেল বিল্ডিংয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ন্যাশনাল গার্ডের সংঘর্ষও হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। ‘ব্রাউন বেরেটস’ নামের একটি নাগরিক অধিকার সংগঠনের সদস্য হোসে অ্যাজেতক্লা এই পদক্ষেপকে “শুধু কঠোর নয়, নিষ্ঠুর” বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এই ব্যাপক বিক্ষোভ সত্ত্বেও, মার্কিন জনমত কিন্তু এখনো বিভক্ত। সিবিএস/ইউগভ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারের নীতিকে ৫৪ শতাংশ আমেরিকান সমর্থন করেন, যেখানে ৪৬ শতাংশ এর বিরোধিতা করেছেন।

৪২ শতাংশ নাগরিক মনে করেন এই নীতিতে তারা নিজেদের আরও নিরাপদ বোধ করেন এবং ৫৩ শতাংশ মনে করেন, ট্রাম্প মূলত বিপজ্জনক অপরাধীদের লক্ষ্য করেই পদক্ষেপ নিচ্ছেন।