ঢাকা ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

    অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি মিললো মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তাদের

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০২:১৭:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
    • / ২৮৮ বার পড়া হয়েছে

    অবশেষে দীর্ঘ ১৭ বছর পর পেশাগত কাজে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পেলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। মাদকবিরোধী অভিযানের সময় এখন থেকে আধুনিক ৯ এমএম আধা-স্বয়ংক্রিয় পিস্তল ব্যবহার করতে পারবেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

    গত ২১ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি গেজেটের মাধ্যমে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতিমালা (সংশোধিত), ২০২৫’ অনুমোদন করে।

    সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, সর্বশেষ অবস্থা বা চরম প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে, গুলি ছোড়ার আগে অবশ্যই কম বল প্রয়োগের সব ধরনের চেষ্টা করতে হবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

    গুলি ছোড়ার ক্ষেত্রে কড়া সতর্কতা

    নীতিমালায় বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ফাঁকা গুলি ছুড়তে হবে, তাও আকাশের দিকে। এরপরও কাজ না হলে হ্যান্ড মাইকে সতর্কবার্তা দিয়ে শুধুমাত্র একজন অপরাধীর কোমরের নিচে, হাঁটু বা পায়ে একটি গুলি ছোড়া যাবে। একাধিক গুলি ছোড়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ, যদি না তা চরম প্রয়োজন হয় এবং তার যৌক্তিকতা প্রমাণ করা যায়।

    অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছেন অধিদপ্তরের ৫৭৯ জন কর্মকর্তা। এদের মধ্যে রয়েছেন ৯০ জন উপপরিচালক, ৯৩ জন সহকারী পরিচালক, ১৮৬ জন পরিদর্শক এবং ২১০ জন উপপরিদর্শক। তাদের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে অস্ত্র সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

    অস্ত্র সংরক্ষণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা

    যতদিন না পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিজস্ব অস্ত্রাগার গড়ে উঠছে, ততদিন অস্ত্র সংরক্ষণ করতে হবে জেলা প্রশাসকের ট্রেজারি রুম, জেলা পুলিশ লাইনস কিংবা সংশ্লিষ্ট থানার অস্ত্রাগারে।

    এছাড়াও কর্মকর্তাদের অস্ত্র ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

    ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানেই বাস্তব প্রেক্ষাপট

    মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই তারা মাঠপর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কারণ, মাদকবিরোধী অভিযান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় অভিযানে যাওয়া কর্মকর্তাদের সামনে অস্ত্রধারী মাদক কারবারিদের মুখোমুখি হতে হয়। আবার সব সময় সহযোগী বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত হয় না।

    গত এক দশকে অভিযান চালাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ডিএনসির ১২৫ জন সদস্য। প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। তা সত্ত্বেও এই সময়ের মধ্যে তারা উদ্ধার করেছেন ৭৮টি পিস্তল, ১৭টি রিভলবার, সাতটি শটগান, ২৭টি ম্যাগাজিন ও এক হাজারের বেশি রাউন্ড গুলি।

    নোডাল সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব

    মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বাংলাদেশে মাদকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার নোডাল সংস্থা হিসেবে কাজ করে। মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত অভিযান, তদন্ত ও মামলার পরিচালনায় যুক্ত থাকেন। তাই তাদের অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতা দেওয়া হলে মাদকবিরোধী কার্যক্রম আরও কার্যকর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নীতিমালাটি গেজেট জারির তারিখ থেকেই কার্যকর ধরা হচ্ছে।

     

    ট্যাগস :

    নিউজটি শেয়ার করুন

    অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি মিললো মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তাদের

    আপডেট সময় ০২:১৭:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

    অবশেষে দীর্ঘ ১৭ বছর পর পেশাগত কাজে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পেলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। মাদকবিরোধী অভিযানের সময় এখন থেকে আধুনিক ৯ এমএম আধা-স্বয়ংক্রিয় পিস্তল ব্যবহার করতে পারবেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

    গত ২১ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি গেজেটের মাধ্যমে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতিমালা (সংশোধিত), ২০২৫’ অনুমোদন করে।

    সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, সর্বশেষ অবস্থা বা চরম প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে, গুলি ছোড়ার আগে অবশ্যই কম বল প্রয়োগের সব ধরনের চেষ্টা করতে হবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

    গুলি ছোড়ার ক্ষেত্রে কড়া সতর্কতা

    নীতিমালায় বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ফাঁকা গুলি ছুড়তে হবে, তাও আকাশের দিকে। এরপরও কাজ না হলে হ্যান্ড মাইকে সতর্কবার্তা দিয়ে শুধুমাত্র একজন অপরাধীর কোমরের নিচে, হাঁটু বা পায়ে একটি গুলি ছোড়া যাবে। একাধিক গুলি ছোড়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ, যদি না তা চরম প্রয়োজন হয় এবং তার যৌক্তিকতা প্রমাণ করা যায়।

    অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছেন অধিদপ্তরের ৫৭৯ জন কর্মকর্তা। এদের মধ্যে রয়েছেন ৯০ জন উপপরিচালক, ৯৩ জন সহকারী পরিচালক, ১৮৬ জন পরিদর্শক এবং ২১০ জন উপপরিদর্শক। তাদের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে অস্ত্র সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

    অস্ত্র সংরক্ষণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা

    যতদিন না পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিজস্ব অস্ত্রাগার গড়ে উঠছে, ততদিন অস্ত্র সংরক্ষণ করতে হবে জেলা প্রশাসকের ট্রেজারি রুম, জেলা পুলিশ লাইনস কিংবা সংশ্লিষ্ট থানার অস্ত্রাগারে।

    এছাড়াও কর্মকর্তাদের অস্ত্র ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

    ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানেই বাস্তব প্রেক্ষাপট

    মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই তারা মাঠপর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কারণ, মাদকবিরোধী অভিযান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় অভিযানে যাওয়া কর্মকর্তাদের সামনে অস্ত্রধারী মাদক কারবারিদের মুখোমুখি হতে হয়। আবার সব সময় সহযোগী বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত হয় না।

    গত এক দশকে অভিযান চালাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ডিএনসির ১২৫ জন সদস্য। প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। তা সত্ত্বেও এই সময়ের মধ্যে তারা উদ্ধার করেছেন ৭৮টি পিস্তল, ১৭টি রিভলবার, সাতটি শটগান, ২৭টি ম্যাগাজিন ও এক হাজারের বেশি রাউন্ড গুলি।

    নোডাল সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব

    মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বাংলাদেশে মাদকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার নোডাল সংস্থা হিসেবে কাজ করে। মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত অভিযান, তদন্ত ও মামলার পরিচালনায় যুক্ত থাকেন। তাই তাদের অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতা দেওয়া হলে মাদকবিরোধী কার্যক্রম আরও কার্যকর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নীতিমালাটি গেজেট জারির তারিখ থেকেই কার্যকর ধরা হচ্ছে।