ঢাকা ০১:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

    পদ্মা সেতুর ৩ বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা টোল আদায়

    বিশেষ প্রতিনিধি
    • আপডেট সময় ০২:৩১:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
    • / ২৭৫ বার পড়া হয়েছে

    বাংলাদেশের স্বপ্নের অবকাঠামো, পদ্মা সেতু, এই সেতু শুধু একটি নির্মাণ নয়, এটি আমাদের জাতীয় গর্ব ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতীক। আজ, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের তিন বছর পূর্তিতে আমরা জানব, কীভাবে এই সেতু গত তিন বছরে টোল আদায়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে। 

    ২০২২ সালের ২৫ জুন, বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। পরদিন, ২৬ জুন থেকে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

    এই সেতু মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলাকে সংযুক্ত করেছে, যা দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন এনেছে।

    গত তিন বছরে, পদ্মা সেতু দিয়ে পাড়ি দিয়েছে এক কোটি ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৭টি যানবাহন! এই বিপুল সংখ্যক যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে মোট ২,৫০৭ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৬০০ টাকা। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদ।

    এই টোল আদায়ের পরিসংখ্যান বছর বছর ক্রমশ বেড়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক:

    • প্রথম বছর, ২০২২-২৩ সালে, ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পাড়ি দেয়, আর টোল আদায় হয় ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি।
    • দ্বিতীয় বছর, ২০২৩-২৪ সালে, যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮ লাখ ১ হাজার ৩৭৪টি, আর আয় হয় ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
    • সর্বশেষ, ২০২৪-২৫ সালে, ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩৩৪টি যানবাহন পাড়ি দেয়, এবং টোল আদায় হয় ৮৫৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

    এই ক্রমবর্ধমান আয় প্রমাণ করে, পদ্মা সেতু কতটা জনপ্রিয় এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩০,১৯৩ কোটি টাকা। এই বিশাল অর্থ নিজস্ব অর্থায়নে বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ সরকার।

    টোল আদায়ের মাধ্যমে এই ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, টোল থেকে আদায়কৃত অর্থের বেশিরভাগই ব্যবহৃত হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ঋণের ১% সুদসহ পরিশোধে, যা ৩৫ বছরে ১৩৬টি কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। বাকি অর্থ ব্যয় হচ্ছে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে।

    প্রতিদিন গড়ে ১৯,০০০-এর বেশি যানবাহন এই সেতু দিয়ে চলাচল করে, এবং সবচেয়ে বেশি চলাচল করে মাঝারি বাস, যা থেকে গত দুই বছরে টোল আদায় হয়েছে ৬২৬ কোটি টাকার বেশি!

    তবে পদ্মা সেতুর টোল হারও বেশ আলোচিত। বর্তমান টোল তালিকা অনুযায়ী:

    • মোটরসাইকেল: ১০০ টাকা
    • কার/জীপ: ৭৫০ টাকা
    • মাঝারি বাস: ২,০০০ টাকা
    • বড় বাস: ২,৪০০ টাকা
    • মাঝারি ট্রাক: ২,৮০০ টাকা
    • এবং বড় ট্রাক বা ট্রেইলারের জন্য ৫,৫০০ থেকে ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত।

    এই টোল হার ফেরির তুলনায় দেড় গুণ বেশি হলেও, সময় সাশ্রয় ও অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এটি ব্যবহারকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। পদ্মা সেতু শুধু টোল আদায়ের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধই করছে না, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

    দক্ষিণাঞ্চলের উৎপাদিত ফসল ও শিল্পজাত পণ্য এখন দ্রুত ঢাকাসহ সারা দেশে পৌঁছাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের একটি পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৩১ বছরে এই সেতু থেকে যোগাযোগ খাতে ১৮.৫ বিলিয়ন ডলার আয় হবে, যা নির্মাণ ব্যয়ের ৫.৫ গুণ!

    পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। এটি প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ নিজের শক্তিতে বিশ্বমানের অবকাঠামো তৈরি করতে পারে। তিন বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার টোল আদায় এই সেতুর জনপ্রিয়তা ও গুরুত্বের প্রমাণ। আগামী দিনে এই সেতু আমাদের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    পদ্মা সেতুর ৩ বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা টোল আদায়

    আপডেট সময় ০২:৩১:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

    বাংলাদেশের স্বপ্নের অবকাঠামো, পদ্মা সেতু, এই সেতু শুধু একটি নির্মাণ নয়, এটি আমাদের জাতীয় গর্ব ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতীক। আজ, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের তিন বছর পূর্তিতে আমরা জানব, কীভাবে এই সেতু গত তিন বছরে টোল আদায়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে। 

    ২০২২ সালের ২৫ জুন, বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। পরদিন, ২৬ জুন থেকে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

    এই সেতু মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলাকে সংযুক্ত করেছে, যা দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন এনেছে।

    গত তিন বছরে, পদ্মা সেতু দিয়ে পাড়ি দিয়েছে এক কোটি ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৭টি যানবাহন! এই বিপুল সংখ্যক যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে মোট ২,৫০৭ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৬০০ টাকা। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদ।

    এই টোল আদায়ের পরিসংখ্যান বছর বছর ক্রমশ বেড়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক:

    • প্রথম বছর, ২০২২-২৩ সালে, ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পাড়ি দেয়, আর টোল আদায় হয় ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি।
    • দ্বিতীয় বছর, ২০২৩-২৪ সালে, যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮ লাখ ১ হাজার ৩৭৪টি, আর আয় হয় ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
    • সর্বশেষ, ২০২৪-২৫ সালে, ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩৩৪টি যানবাহন পাড়ি দেয়, এবং টোল আদায় হয় ৮৫৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

    এই ক্রমবর্ধমান আয় প্রমাণ করে, পদ্মা সেতু কতটা জনপ্রিয় এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩০,১৯৩ কোটি টাকা। এই বিশাল অর্থ নিজস্ব অর্থায়নে বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ সরকার।

    টোল আদায়ের মাধ্যমে এই ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, টোল থেকে আদায়কৃত অর্থের বেশিরভাগই ব্যবহৃত হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ঋণের ১% সুদসহ পরিশোধে, যা ৩৫ বছরে ১৩৬টি কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। বাকি অর্থ ব্যয় হচ্ছে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে।

    প্রতিদিন গড়ে ১৯,০০০-এর বেশি যানবাহন এই সেতু দিয়ে চলাচল করে, এবং সবচেয়ে বেশি চলাচল করে মাঝারি বাস, যা থেকে গত দুই বছরে টোল আদায় হয়েছে ৬২৬ কোটি টাকার বেশি!

    তবে পদ্মা সেতুর টোল হারও বেশ আলোচিত। বর্তমান টোল তালিকা অনুযায়ী:

    • মোটরসাইকেল: ১০০ টাকা
    • কার/জীপ: ৭৫০ টাকা
    • মাঝারি বাস: ২,০০০ টাকা
    • বড় বাস: ২,৪০০ টাকা
    • মাঝারি ট্রাক: ২,৮০০ টাকা
    • এবং বড় ট্রাক বা ট্রেইলারের জন্য ৫,৫০০ থেকে ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত।

    এই টোল হার ফেরির তুলনায় দেড় গুণ বেশি হলেও, সময় সাশ্রয় ও অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এটি ব্যবহারকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। পদ্মা সেতু শুধু টোল আদায়ের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধই করছে না, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

    দক্ষিণাঞ্চলের উৎপাদিত ফসল ও শিল্পজাত পণ্য এখন দ্রুত ঢাকাসহ সারা দেশে পৌঁছাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের একটি পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৩১ বছরে এই সেতু থেকে যোগাযোগ খাতে ১৮.৫ বিলিয়ন ডলার আয় হবে, যা নির্মাণ ব্যয়ের ৫.৫ গুণ!

    পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। এটি প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ নিজের শক্তিতে বিশ্বমানের অবকাঠামো তৈরি করতে পারে। তিন বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার টোল আদায় এই সেতুর জনপ্রিয়তা ও গুরুত্বের প্রমাণ। আগামী দিনে এই সেতু আমাদের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।