ঢাকা ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    ২১ আগস্ট মামলায় তারেক রহমান-বাবরসহ সকল আসামির খালাস বহাল

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১১:১৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
    • / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে

    বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

    আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির। তাদের সঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুল ও আজমল হোসেন খোকন।

    রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ।

    ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ছিলেন ওই হামলার মূল লক্ষ্য। হামলায় নিহত হন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন, আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী। এ ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিভীষিকাময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

    ঘটনার পর মতিঝিল থানায় দুটি মামলা হয়—একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি বিস্ফোরক আইনে। মামলার তদন্ত শুরু থেকেই বিতর্কিত হয়ে ওঠে। অভিযোগ ওঠে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা হয়েছে এবং তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। ২০০৭ সালের এক-এগারোর সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। ২০০৮ সালে আদালতে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পুনরায় অধিকতর তদন্ত করে এবং তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনকে নতুন আসামি করা হয়।

    ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার বিচার শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

    এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে হাইকোর্টে দীর্ঘ শুনানির পর ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়। হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড বাতিল করে সব আসামিকে খালাস দেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, ২১ আগস্টের হামলা দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ ঘটনা হলেও মামলার তদন্ত যথাযথ ও স্বাধীনভাবে হয়নি। এতে অসঙ্গতি ও দুর্বলতা ছিল, ফলে ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। হাইকোর্ট নতুন করে যথাযথ ও পেশাদার সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের সুপারিশ করে এবং মামলার নথিপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

    রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে, দাবি করে যে বিচারিক আদালতের সাজাই যথাযথ ছিল। অন্যদিকে আসামিপক্ষ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে। আপিল বিভাগে গত ১৭ জুলাই শুনানি শুরু হয় এবং ধারাবাহিকভাবে ৩১ জুলাই, ১৯, ২০ ও ২১ আগস্ট পাঁচ দিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালত আজ রায় ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

    রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাদাত মো. সায়েম ভূঁইয়া ও সাদিয়া আফরিন। আসামিপক্ষে শুনানি করেন এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    ২১ আগস্ট মামলায় তারেক রহমান-বাবরসহ সকল আসামির খালাস বহাল

    আপডেট সময় ১১:১৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

    আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির। তাদের সঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুল ও আজমল হোসেন খোকন।

    রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ।

    ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ছিলেন ওই হামলার মূল লক্ষ্য। হামলায় নিহত হন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন, আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী। এ ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিভীষিকাময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

    ঘটনার পর মতিঝিল থানায় দুটি মামলা হয়—একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি বিস্ফোরক আইনে। মামলার তদন্ত শুরু থেকেই বিতর্কিত হয়ে ওঠে। অভিযোগ ওঠে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা হয়েছে এবং তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। ২০০৭ সালের এক-এগারোর সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। ২০০৮ সালে আদালতে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পুনরায় অধিকতর তদন্ত করে এবং তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনকে নতুন আসামি করা হয়।

    ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার বিচার শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

    এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে হাইকোর্টে দীর্ঘ শুনানির পর ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়। হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড বাতিল করে সব আসামিকে খালাস দেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, ২১ আগস্টের হামলা দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ ঘটনা হলেও মামলার তদন্ত যথাযথ ও স্বাধীনভাবে হয়নি। এতে অসঙ্গতি ও দুর্বলতা ছিল, ফলে ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। হাইকোর্ট নতুন করে যথাযথ ও পেশাদার সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের সুপারিশ করে এবং মামলার নথিপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

    রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে, দাবি করে যে বিচারিক আদালতের সাজাই যথাযথ ছিল। অন্যদিকে আসামিপক্ষ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে। আপিল বিভাগে গত ১৭ জুলাই শুনানি শুরু হয় এবং ধারাবাহিকভাবে ৩১ জুলাই, ১৯, ২০ ও ২১ আগস্ট পাঁচ দিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালত আজ রায় ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

    রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাদাত মো. সায়েম ভূঁইয়া ও সাদিয়া আফরিন। আসামিপক্ষে শুনানি করেন এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।