ভারতের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০% শুল্ক, রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা

- আপডেট সময় ১২:০৬:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে
ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক যুক্ত করা হয়েছে, যা রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনা অব্যাহত রাখার কারণে আরোপ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে ভারতের রপ্তানিকারকদের জন্য সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিটিআরআই-এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন শুল্ক নীতির কারণে ভারতের প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি প্রভাবিত হবে। এর ফলে ভারতীয় পণ্য মার্কিন বাজারে অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে, যা তাদের প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে দেবে।
প্রাক্তন আইসিএআই প্রেসিডেন্ট বেদ জৈন এই পরিস্থিতিকে ‘দুটি খারাপের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়া’র মতো বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “রাশিয়ার তেল আমদানি ভারতের অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য। এটি বন্ধ করলে অর্থনীতি অকার্যকর হবে, আর চালিয়ে গেলে রপ্তানিতে বড় ক্ষতি হবে।”
এই শুল্কের ফলে ভারতের শ্রমনির্ভর খাতগুলো, যেমন পোশাক, হীরা ও গয়না, কার্পেট, চিংড়ি ও আসবাব শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব খাতে কাজ করা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়বেন এবং এর ফলে একটি বড় আকারের কর্মসংস্থান সংকট তৈরি হতে পারে। টেক্সটাইল ব্যবসায়ী ভদ্রেশ দোধ্যা বলেন, “এত বেশি শুল্ক আমদানিকারকরা মেনে নেবে না। পুরো সরবরাহ চেইন অল্প মুনাফায় চলে, তাই এই চাপ টেকানো অসম্ভব। শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদেরই বাড়তি দাম গুনতে হবে।”
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, এই শুল্ক শুধু ভারতকে নয়, যুক্তরাষ্ট্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। উচ্চমূল্য এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে, যা আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও ধীর করে দেবে। অর্থনীতিবিদ এসপি শর্মা বলেন, “এর কোনো লাভ যুক্তরাষ্ট্রের হবে না। ট্রাম্পের আগের মেয়াদে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১.৪ শতাংশ। আবারও একই ধরণের ধীর প্রবৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।”
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের মোট রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলার। এই শুল্কের কারণে তা ২০২৬ অর্থবছরে ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। এতে প্রায় ৩০ শতাংশ রপ্তানি শুল্কমুক্ত থাকলেও, ৪ শতাংশে ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ৬৬ শতাংশে (৬০.২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য) ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। এর ফলে ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া আমদানির সুবিধা পাবে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো—যেমন চীন, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো ও তুরস্ক। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ভারতের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ১৮ শতাংশ দখল করে আছে, তাই ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ ভারতের শিল্প ও কর্মসংস্থানে একটি তীব্র ধাক্কা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।