দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে ‘বিশেষ’ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার দুপুর ২টায় জুম প্ল্যাটফর্মে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার পাশাপাশি দেওয়া হবে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে অংশ নেবেন সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ কমিশনার, পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এবং পুলিশ সুপাররা (এসপি)। বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি।

গত কয়েক দিনে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। আন্দোলন, সংঘর্ষ, উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি, এমনকি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২৭ আগস্ট আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের যমুনা অভিমুখে যাত্রাকালে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল, জলকামান ও লাঠিপেটার ঘটনা, যেখানে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। ২৯ আগস্ট রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও গণ অধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে, এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় নুরুল হক নুরসহ অনেক নেতা-কর্মী আহত হন। ৩০ ও ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে, আর ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

এ ছাড়া ডাকসু, জাকসু, রাকসু ও চাকসু ছাত্রসংসদ নির্বাচন ঘিরেও উত্তাপ ছড়িয়েছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে আজকের বৈঠকে মাঠ প্রশাসনকে আরও কঠোর অবস্থান নিতে এবং সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
চলতি মাসের শেষ দিকে শুরু হচ্ছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। উৎসবকে ঘিরে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে বৈঠক থেকে মাঠ প্রশাসনকে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন বক্তব্য বা আপত্তিকর কনটেন্ট প্রচারিত হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ থাকবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন বাধ্যতামূলক করার কথাও বলা হবে। দুর্গাপূজা নির্বিঘ্ন করতে মাঠ প্রশাসনকে ১৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হবে।

এ বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, শিল্পকারখানায় অস্থিরতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব রোধ এবং কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার নিয়েও আলোচনা হবে। বিশেষ করে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধের জেরে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনাটিও আলোচনায় আসবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষের পর সেখানে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আলাদা দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।