ঢাকা ০৭:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সাড়ে নয় লাখ টন সার আমদানিতে অচলাবস্থা

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৭:৫২:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
    • / ২৫২ বার পড়া হয়েছে

    কৃষি মন্ত্রণালয়ের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে প্রায় সাড়ে নয় লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানিতে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই সংকট আসন্ন বোরো মৌসুমে দেশে সারের সরবরাহে মারাত্মক ঘাটতি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

    মন্ত্রণালয় প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য টেন্ডার আহ্বান করে থাকলেও, এবার তা তিন মাসেরও বেশি সময় পরে শুরু হয়েছে। এই বিলম্বের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, যা সরকারের খরচ প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

    আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয় সাধারণত সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দিয়ে থাকে। কিন্তু এবার সেই পদ্ধতি পরিবর্তন করে মন্ত্রণালয় নিজেরাই একটি নির্দিষ্ট দাম প্রস্তাব করেছে। গত ২৪ জুলাই সাড়ে নয় লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, যেখানে টেন্ডার দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ৬ আগস্ট। এরপর মন্ত্রণালয় ১৭ আগস্টের মধ্যে প্রস্তাবিত মূল্যে রাজি থাকলে সম্মতিপত্র চায়। কিন্তু আমদানিকারকরা এই প্রস্তাবে রাজি হচ্ছেন না।

    আমদানিকারকদের অভিযোগ, মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক বাজারে সারের বর্তমান এফওবি (Free on Board) মূল্যের চেয়েও কম মূল্য প্রস্তাব করেছে। শুধু তাই নয়, তারা দেশ অনুযায়ী সারের দামও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, যা পুরো প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, মরক্কো থেকে টিএসপি সার আমদানির জন্য টনপ্রতি ৬৯৪ ডলার এবং চীন থেকে ডিএপি আমদানির জন্য ৮৪৮ ডলারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমদানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে সার পাওয়া সম্ভব নয়।

    মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমদানিকারকদের সিন্ডিকেট ভাঙার জন্যই এই নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত সাত-আটজন আমদানিকারক টেন্ডারে অংশ নিত, কিন্তু এবার ৪৯টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, আমদানিকারকদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে কিছুটা কম দাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

    অন্যদিকে, আমদানিকারকরা বলছেন, ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সারের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক দেশ চীন নিজ দেশের সুরক্ষার জন্য রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে এবং কোটা ব্যবস্থা চালু করেছে। অন্যদিকে, মরক্কোর কাছেও নতুন রপ্তানির জন্য পর্যাপ্ত সার মজুত নেই, কারণ তারা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত কম মূল্যে এবং নির্দিষ্ট দেশ থেকে সার আমদানি করা প্রায় অসম্ভব।

    একজন অভিজ্ঞ আমদানিকারক জানান, টেন্ডার দিতে দেরি হওয়ায় তারা জুলাই পর্যন্ত চীন থেকে কোনো সার আমদানি করতে পারেননি। এখন কম দামে সার কেনার প্রস্তাব দেওয়ায় কেউ রাজি হচ্ছে না। যারা অল্প পরিমাণে কার্যাদেশ পেয়েছেন, তারাও শেষ পর্যন্ত সার আনতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

    জানা গেছে, সার ব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত কমিটি তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনো সভা না করায় টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমামকে একাধিকবার ফোন এবং খুদেবার্তা দেওয়া হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সাড়ে নয় লাখ টন সার আমদানিতে অচলাবস্থা

    আপডেট সময় ০৭:৫২:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    কৃষি মন্ত্রণালয়ের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে প্রায় সাড়ে নয় লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানিতে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই সংকট আসন্ন বোরো মৌসুমে দেশে সারের সরবরাহে মারাত্মক ঘাটতি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

    মন্ত্রণালয় প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য টেন্ডার আহ্বান করে থাকলেও, এবার তা তিন মাসেরও বেশি সময় পরে শুরু হয়েছে। এই বিলম্বের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, যা সরকারের খরচ প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

    আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয় সাধারণত সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দিয়ে থাকে। কিন্তু এবার সেই পদ্ধতি পরিবর্তন করে মন্ত্রণালয় নিজেরাই একটি নির্দিষ্ট দাম প্রস্তাব করেছে। গত ২৪ জুলাই সাড়ে নয় লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, যেখানে টেন্ডার দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ৬ আগস্ট। এরপর মন্ত্রণালয় ১৭ আগস্টের মধ্যে প্রস্তাবিত মূল্যে রাজি থাকলে সম্মতিপত্র চায়। কিন্তু আমদানিকারকরা এই প্রস্তাবে রাজি হচ্ছেন না।

    আমদানিকারকদের অভিযোগ, মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক বাজারে সারের বর্তমান এফওবি (Free on Board) মূল্যের চেয়েও কম মূল্য প্রস্তাব করেছে। শুধু তাই নয়, তারা দেশ অনুযায়ী সারের দামও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, যা পুরো প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, মরক্কো থেকে টিএসপি সার আমদানির জন্য টনপ্রতি ৬৯৪ ডলার এবং চীন থেকে ডিএপি আমদানির জন্য ৮৪৮ ডলারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমদানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে সার পাওয়া সম্ভব নয়।

    মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমদানিকারকদের সিন্ডিকেট ভাঙার জন্যই এই নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত সাত-আটজন আমদানিকারক টেন্ডারে অংশ নিত, কিন্তু এবার ৪৯টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, আমদানিকারকদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে কিছুটা কম দাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

    অন্যদিকে, আমদানিকারকরা বলছেন, ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সারের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক দেশ চীন নিজ দেশের সুরক্ষার জন্য রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে এবং কোটা ব্যবস্থা চালু করেছে। অন্যদিকে, মরক্কোর কাছেও নতুন রপ্তানির জন্য পর্যাপ্ত সার মজুত নেই, কারণ তারা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত কম মূল্যে এবং নির্দিষ্ট দেশ থেকে সার আমদানি করা প্রায় অসম্ভব।

    একজন অভিজ্ঞ আমদানিকারক জানান, টেন্ডার দিতে দেরি হওয়ায় তারা জুলাই পর্যন্ত চীন থেকে কোনো সার আমদানি করতে পারেননি। এখন কম দামে সার কেনার প্রস্তাব দেওয়ায় কেউ রাজি হচ্ছে না। যারা অল্প পরিমাণে কার্যাদেশ পেয়েছেন, তারাও শেষ পর্যন্ত সার আনতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

    জানা গেছে, সার ব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত কমিটি তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনো সভা না করায় টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমামকে একাধিকবার ফোন এবং খুদেবার্তা দেওয়া হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।