প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খুন ছিল পূর্বপরিকল্পিত

- আপডেট সময় ১২:৪১:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
- / ৯ বার পড়া হয়েছে
রাজধানী ঢাকার বনানী এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীর নাম জাহিদুল ইসলাম পারভেজ। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ২২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর টেক্সটাইল ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়। এরই একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের চুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন পারভেজ। সেখান থেকে প্রথমে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ মর্তমানে কুর্মিটোলা হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
বনানী থানার ওসি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে হত্যা পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। শনিবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন দাবি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলেছে, শনিবার (১৯ এপ্রিল) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
ঘটনাস্থলে কী হয়েছিল, তার বর্ণনা দিয়ে তারা বলছে, শহীদ জাহিদুল ইসলাম পারভেজ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই-তিনজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বসে সিঙাড়া খাচ্ছিলেন। এমন সময় ছাত্র মেহেরাজ ইসলাম এবং আরও দুজন ছাত্রীসহ কয়েকজন ওই পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তারা পারভেজকে উদ্দেশ করে ‘এদিকে তাকাচ্ছ কেন?’, ‘এদিকে তাকালে চোখ তুলে দেব’— এ ধরনের টিজিংমূলক উসকানিমূলক মন্তব্য করতে থাকেন।
পারভেজ জবাবে বলেন, কী দোষ করেছি ভাই? এতে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং পারভেজের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুস সালাম হস্তক্ষেপ করেন এবং উভয় পক্ষকে মীমাংসা করে দেন।
বৈষম্যবিরোধী নেতাদের বিষয়ে সংগঠনটি বলেছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে, মেহেরাজ ইসলাম গং এই মীমাংসা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ১০-১৫টি লাশ ফেলার হুমকি দিয়ে বহিরাগতদের ডেকে আনেন। এই হামলায় মেহেরাজ ইসলামের সাথে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শোভহান নিয়াজ তুষার এবং বৈষম্যবিরোধী কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজী নেতৃত্বে বেশ কিছু উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসী জড়িত ছিল। তারা পারভেজকে ছুরি দিয়ে বুকের ওপর আঘাত করে হত্যা করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের মীমাংসার পর যখন হুমকি-ধমকি চলছিল, তখন শহীদ পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আকুতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন কোনো ধরনের সহায়তা করেনি।
আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পারভেজ ইসলামের ওপর চালানো এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। নতুবা সামান্য একটি ঘটনার জেরে, প্রক্টরের মীমাংসার পরও একজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছুরি মেরে হত্যা করার প্রশ্নই আসে না।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে, ছাত্রলীগের কায়দায় বৈষম্যবিরোধী নেতারা দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় একটি পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ হিসেবে ছাত্রদলকে নেতৃত্বশূন্য ও ক্যাম্পাসে দুর্বল করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ছাত্রদলের রাজনীতিতে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করতে তারা একের পর এক ভয়াবহ কৌশল নিচ্ছে।
সংগঠনটি বলছে, আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা, হুকুমদাতা এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
আমরা জাতির সামনে প্রকৃত সত্য তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। এমন বর্বর, কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চলবে, চলতেই থাকবে। ইনশাআল্লাহ।