ঢাকা ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

বগুড়ায় মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ায় বাবাকে পিটিয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৫:০৪:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
  • / ২৬০ বার পড়া হয়েছে

বগুড়ায় ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় বাবাকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জিতু ইসলামের বিরুদ্ধে। বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম শাকিল। তিনি শহরের শিববাটি শাহি মসজিদ এলাকার মৃত সাজু মিয়ার ছেলে। পেশায় রিকশাচালক শাকিল শিববাটি এলাকায় রানার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আলমাস আলী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। রবিবার (১৫ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাকিলকে পেটানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।

নিহত শাকিলের ছোট বোন (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) জানায়, আমার ভাইয়ের কিশোরী মেয়েকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জিতু ইসলাম বিভিন্ন সময় বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু জিতু কিছুটা বয়স্ক হওয়ায় শাকিল বিয়ের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। শনিবার সকাল নয়টার দিকে শাকিল রিকশা নিয়ে বের হন এবং ১০টায় জিতুর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। সেখানে জিতু ও তার লোকজন আমার ভাইকে গণপিটুনি দেয়। এরপর আমার ভাই রিকশা রেখে মসজিদের পেছন দিয়ে আহত অবস্থায় আমাদের বাড়িতে আসেন। ভাই আমাকে বলেন, আমাকে বাঁচাও, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।

তখন আমি তার চিকিৎসার জন্য টাকা আনতে পাশের বাড়ি যাই। ফিরে এসে দেখি জিতুর লোকেরা আমাদের বাসার চারপাশ ঘিরে রেখেছে। তাদের সবার হাতে অস্ত্র। তখন আমার ভাইকে ঘরের ভেতর রেখে বাইরে তালা দিই। এ সময় জিতু ও তার দলবল আমাদের ঘরের তালা ভেঙে আমার ভাইকে টানতে টানতে বের করে নিয়ে যায়। এরপর তারা আমার ভাইকে নদীর পাড়ে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ছিলিমপুর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক হারুনার রশিদ জানান, স্থানীয় লোকজন শাকিলকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

পুলিশ পরিদর্শক আলমাস আলী বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাকিলকে মারধর করে চাকুসহ পুলিশে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল আটক ব্যক্তিদের। কিন্তু শাকিল গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে ফেলে পালিয়ে যান তারা।

জানতে চাইলে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বসির জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন জিতু, মতি ও বিপ্লব।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আটক জিতুর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা নেই। তবে লোকমুখে শুনেছি তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা।

এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল জিতুর দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, জিতু বগুড়া জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে তাকে বহিষ্কারের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বগুড়ায় মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ায় বাবাকে পিটিয়ে হত্যা

আপডেট সময় ০৫:০৪:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

বগুড়ায় ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় বাবাকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জিতু ইসলামের বিরুদ্ধে। বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম শাকিল। তিনি শহরের শিববাটি শাহি মসজিদ এলাকার মৃত সাজু মিয়ার ছেলে। পেশায় রিকশাচালক শাকিল শিববাটি এলাকায় রানার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আলমাস আলী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। রবিবার (১৫ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাকিলকে পেটানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।

নিহত শাকিলের ছোট বোন (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) জানায়, আমার ভাইয়ের কিশোরী মেয়েকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জিতু ইসলাম বিভিন্ন সময় বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু জিতু কিছুটা বয়স্ক হওয়ায় শাকিল বিয়ের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। শনিবার সকাল নয়টার দিকে শাকিল রিকশা নিয়ে বের হন এবং ১০টায় জিতুর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। সেখানে জিতু ও তার লোকজন আমার ভাইকে গণপিটুনি দেয়। এরপর আমার ভাই রিকশা রেখে মসজিদের পেছন দিয়ে আহত অবস্থায় আমাদের বাড়িতে আসেন। ভাই আমাকে বলেন, আমাকে বাঁচাও, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।

তখন আমি তার চিকিৎসার জন্য টাকা আনতে পাশের বাড়ি যাই। ফিরে এসে দেখি জিতুর লোকেরা আমাদের বাসার চারপাশ ঘিরে রেখেছে। তাদের সবার হাতে অস্ত্র। তখন আমার ভাইকে ঘরের ভেতর রেখে বাইরে তালা দিই। এ সময় জিতু ও তার দলবল আমাদের ঘরের তালা ভেঙে আমার ভাইকে টানতে টানতে বের করে নিয়ে যায়। এরপর তারা আমার ভাইকে নদীর পাড়ে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ছিলিমপুর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক হারুনার রশিদ জানান, স্থানীয় লোকজন শাকিলকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

পুলিশ পরিদর্শক আলমাস আলী বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাকিলকে মারধর করে চাকুসহ পুলিশে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল আটক ব্যক্তিদের। কিন্তু শাকিল গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে ফেলে পালিয়ে যান তারা।

জানতে চাইলে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বসির জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন জিতু, মতি ও বিপ্লব।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আটক জিতুর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা নেই। তবে লোকমুখে শুনেছি তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা।

এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল জিতুর দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, জিতু বগুড়া জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে তাকে বহিষ্কারের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।