নেপথ্যে অপরাধী চক্রের দ্বন্দ্ব!
রাজধানীতে আতঙ্কের রাজত্ব: ৫ মাসে ৫৬ খুন

- আপডেট সময় ০১:৪৬:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
- / ২৫২ বার পড়া হয়েছে
ঢাকায় এখন চলছে এক ভয়ংকর অপরাধের রাজত্ব। গত মাত্র পাঁচ মাসে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত, রাজধানীতে খুন হয়েছেন ১৬৮ জন! আর এর এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ৫৬টি হত্যাকাণ্ডই ঘটেছে অপরাধী চক্রের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ডিশ-ইন্টারনেট ব্যবসা এসব খুনের কারণ।
তবে এই হত্যাকাণ্ডগুলোর বেশিরভাগই পূর্বপরিকল্পিত। এর পেছনে রয়েছে পলাতক সন্ত্রাসীদের ভয়ংকর থাবা। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এই সন্ত্রাসী চক্রগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠছে,
কেবল আইনশৃঙ্খলা নয়, এর ফলে তৈরি হচ্ছে এক তীব্র সামাজিক অস্থিরতা। সবচেয়ে ভয়ংকর অভিযোগ হলো, এসব সন্ত্রাসীর পেছনে নাকি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে!
আসুন, কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা দেখি। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে বাড্ডায় দুজন ইন্টারনেট ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গত ২৫শে মে ইন্টারনেট ব্যবসায়ী ও বিএনপির নেতা কামরুল আহসান সাধনকে বাড্ডায় প্রকাশ্য দিবালোকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডারত অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
এর আগে, ২০শে মার্চ বাড্ডারই আরেক ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমন মিয়াকে গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। র্যাব জানিয়েছে, বাড্ডার পলাতক সন্ত্রাসী মেহেদী ও রবিন গ্রুপের মধ্যে চাঁদাবাজির দ্বন্দ্বেই সুমনকে খুন করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আটটি অপরাধ বিভাগের পরিসংখ্যান আরও ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরে। গত পাঁচ মাসে ১৬৮টি খুনের মধ্যে ৫৬টিই হয়েছে চাঁদাবাজি, ডিশ-ইন্টারনেট ব্যবসা, এবং সম্পত্তি দখলকে কেন্দ্র করে।
ডিএমপির ক্রাইম অ্যানালাইসিস বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই ৫৬টি হত্যার পেছনে রয়েছে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, অক্সিজেন সরবরাহ, হোটেল-রেস্তোরাঁয় কাঁচামাল সরবরাহ, নির্মাণসামগ্রী, বিশুদ্ধ পানির ব্যবসা, ফুটপাত ও মার্কেটে চাঁদা আদায়, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বাজার ও টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ ও পানির অবৈধ সংযোগ, এবং রাস্তাঘাট উন্নয়ন কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ। এই খাতগুলোতে মাসে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়, আর এই অর্থের নিয়ন্ত্রণ নিতেই চলছে এই খুনোখুনি!
সূত্রাপুর, লালবাগ, চকবাজার, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, তুরাগ, বাড্ডা, উত্তরা, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, শ্যামপুর—ডিএমপির প্রায় সব থানা এলাকাতেই এমন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পুলিশের তদন্ত এবং স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, অনেক ক্ষেত্রেই হত্যার আগে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার হুমকি পেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও তাদের রক্ষা হয়নি।
লালবাগে ২১শে মে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহকারী রাসেল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার সঙ্গে ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় প্রতিপক্ষ চক্রের দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি মাসে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে রাজি না হওয়াই রাসেলের মৃত্যুর কারণ হয়েছে।
একইভাবে, এপ্রিলে কামরাঙ্গীরচরের খালপাড় এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণকারী রফিকুল ইসলাম খুন হন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থাকা একটি গ্রুপ অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছিল।
গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি রাতে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত বাহিনীর পরিচয়ে ২০-২৫ জন চাঁদাবাজ মিরপুরের স্বাধীন মার্কেটে ভাঙচুর করে। কারণ, তারা ১০ লাখ টাকা চাঁদা পায়নি।
পল্লবীতে ২০শে জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তার, ডিশ ও ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু ওরফে ব্লেড বাবুকে খুন করে আরেকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ই আগস্টের পর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ৪২৬ জন আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।