ভেঙে ফেলা হচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য

- আপডেট সময় ০১:৩৫:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
- / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে
দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর শিল্পচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেখানে নান্দনিক স্থাপনা, ভাস্কর্য বা স্মারকগুলো সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বহন করে। কিন্তু জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা একটি খবর এখন আলোচনা আর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি একটি ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও হতাশা তৈরি করেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত জানুয়ারি মাসে স্থাপিত ‘অঞ্জলি লহ মোর’ নামের ভাস্কর্যটি ভাঙ্গা হচ্ছে।
মাত্র এক বছরও পার হয়নি, এর মধ্যেই এটিকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনের আদেশে, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশেই ছুটির মধ্যেই এই কাজ শুরু হয়েছে।
ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ ভবন এবং পুরাতন কলা অনুষদ ভবনের মাঝামাঝি পুকুরের অংশে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরগুলোর সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল, যার জন্য চার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করা হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল পুকুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।
কিন্তু, ৫ই আগস্টের পর, অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর, বিভিন্ন মহল এবং নতুন প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তি এই ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তি তোলেন। আর এর ফলস্বরূপই এটিকে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে, এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা হতাশ। ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান তুষার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে তৈরি ‘অঞ্জলি লহ মোর’ নামক যে স্থাপনাটি, তা আজ প্রশাসনের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হচ্ছে – যা খুবই দুঃখজনক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের স্থাপনাগুলোর মধ্যে এটি ছিল অন্যতম।” তিনি আরও বলেন যে, নতুন-নতুন স্থাপনার ভিড়ে এমন নান্দনিক সৌন্দর্যবর্ধনের স্থান আজকাল তেমন দেখা যায় না। তার মতে, ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত ছাড়াও অন্যভাবে এটি নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করা যেত, যা অধিক যুক্তিযুক্ত হতো।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান এবং প্রকৌশল দপ্তরের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল ইসলাম কেউই সরাসরি অবগত নন বলে জানিয়েছেন।
তবে, পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, “ভাস্কর্যটি বর্তমান প্রশাসন গ্রহণ করছে না। তাই এটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। উপাচার্য স্যারের পক্ষ থেকেই সিদ্ধান্ত এসেছে। এটির বিষয়ে প্রথমে ছাত্ররাই আপত্তি জানিয়েছিল। তারাই ভাঙার চেষ্টা করেছিল ৫ই আগস্টের পর।”
কিন্তু, মজার বিষয় হলো, ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে এমন কোনো সুস্পষ্ট আপত্তির তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরও নিশ্চিত করেছে যে, তাদের পক্ষ থেকে এমন কোনো দাবি জানানো হয়নি। উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করা ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী অবশ্য বলেছেন যে, ডিনবৃন্দ ও সবাইকে নিয়ে আগেই একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবং বিতর্কের কারণেই ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।