সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় ফরমাল চার্জ ( আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিল করা হয়েছে। রবিবার (১ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়। অভিযোগ দাখিলের পর এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি চলছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত বছরের জুলাই-আগস্টে সারাদেশে যে গণহত্যা হয় তার প্রধান নির্দেশদাতা হিসেবে দায়ী করে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়।

চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম রবিবার (১ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। এ সময় অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের আগে রাজধানীর চাঁনখারপুলের ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) দাখিল করা হয়। এটি নিয়ে এখন পর্যন্ত দুটো অভিযোগ দাখিল হলো।

এর আগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১২ মে সকালে তদন্ত সংস্থা থেকে প্রসিকিশনের কাছে এই মামলায় পাঁচটি অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

তদন্ত সংস্থা ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ওইদিন দুপুরে ট্রাইব্যুনালে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান। এ সময় তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনাকে ‘গুম ও আয়নাঘরের নিউক্লিয়াস’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও গণঅভ্যুত্থানের সময়কার আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রথমে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর সেই তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটর পর্যালোচনা করেন। পরে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করার নিয়ম।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জমা দেওয়া হয়। এরপর এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এখন অভিযোগ আমলে (কগনিজেন্স) নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি হবে।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানের সময়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।

এ মামলা ছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।