৯/১১ হামলার আগেই অবগত ছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দারা-টাকার কার্লসন

- আপডেট সময় ১২:০৭:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে
মার্কিন সাংবাদিক ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক ভাষ্যকার টাকার কার্লসন বিস্ফোরক দাবি করেছেন যে, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার আগে থেকেই এ বিষয়ে অবগত ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, একটি আসন্ন প্রামাণ্যচিত্র সিরিজে এ বিষয়ে চাপা থাকা বহু তথ্য তিনি উন্মোচন করবেন।
গত মঙ্গলবার পিয়ার্স মরগানের অনুষ্ঠান আনসেন্সরড নিউজে অংশ নিয়ে কার্লসন বলেন, ইসরায়েলের নেতৃত্ব কখনোই ৯/১১ হামলা নিয়ে তাদের মনোভাব গোপন করেনি। বরং তারা মনে করত, ওই হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্র–ইসরায়েল সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমি তো কখনো বলিনি যে হামলাটা ইহুদিরা করেছে। প্রকৃতপক্ষে এমন কথা বলা আসল প্রশ্নগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা। এতে সত্যিকারের অনুসন্ধান দুর্বল হয়।”
কার্লসন আরও বলেন, ৯/১১ হামলার পরপরই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “এটা আসলে ভালো একটা ঘটনা। কারণ এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে, যেটিতে আমরা কয়েক দশক ধরে অস্তিত্বের লড়াই করছি।” তিনি উল্লেখ করেন, ২০০২ সালে মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া নেতানিয়াহুর সাক্ষ্যে স্পষ্ট হয়েছিল যে, কখনো কখনো গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে যুদ্ধে যেতে ‘বোমা মেরে বাধ্য করতে হয়’। নেতানিয়াহু তখন ৯/১১ হামলার সঙ্গে পার্ল হারবারে জাপানি হামলার তুলনা করেছিলেন।
কার্লসন তার বক্তব্যে বহুল আলোচিত ‘ইসরায়েলি আর্ট স্টুডেন্টস’ প্রসঙ্গও টানেন। তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে জনসাধারণ খুব কম জানে এবং এ–সংক্রান্ত অধিকাংশ প্রতিবেদন গায়েব হয়ে গেছে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এই তথাকথিত ‘আর্ট স্টুডেন্টস’ আসলে শিল্পশিক্ষার্থী ছিলেন না, বরং ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার করে কিছুদিন আটক রাখা হয়েছিল, কিন্তু পরে অভিযোগ ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন, আমি ইন্টারনেট নয়, এফবিআইয়ের নথি থেকে বলছি, ৯/১১ হামলা ভিডিও করেছিলেন এবং স্পষ্টতই আগে থেকেই হামলার খবর জানতেন।”
‘ইসরায়েলি আর্ট স্টুডেন্টস’ প্রসঙ্গ প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০০০ সালের শেষ দিকে। তখন দেখা যায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সামরিক সংস্থার বিভিন্ন ভবনে ঘোরাফেরা করছে, ছবি বিক্রি করছে এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা বারবার চিহ্নিত নয় এমন গোপন স্থান, প্রবেশপথ এমনকি কর্মকর্তাদের বাসভবনেও যাতায়াত করত।
সেসময়কার গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়, ২০০১ সালের শুরুর দিক থেকে ৯/১১ হামলার আগপর্যন্ত অন্তত ১৪০ জন ইসরায়েলি নাগরিককে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আটক করা হয়েছিল। হামলার পর আরও প্রায় ৬০ জনকে আটক করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওই ‘আর্ট স্টুডেন্টস’-এর কিছু দল হামলাকারীদের আবাসস্থলের কাছাকাছি বাড়িও ভাড়া নিয়েছিল।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা, যা বিশ্বজুড়ে ৯/১১ হামলা নামে পরিচিত। আল-কায়েদার সদস্যরা চারটি উড়োজাহাজ ছিনতাই করে এর মধ্যে দুটি নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টুইন টাওয়ারে আঘাত হানে, একটি মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনে বিধ্বস্ত হয় এবং চতুর্থটি পেনসিলভানিয়ায় ভেঙে পড়ে। ওই ভয়াবহ ঘটনায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হন এবং আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।
হামলার সময় টুইন টাওয়ারে ১৭ হাজার ৪০০ মানুষ ছিলেন। নর্থ টাওয়ারে আঘাত হানা স্থানে কেউ বেঁচে যেতে পারেননি, তবে সাউথ টাওয়ারের ইমপ্যাক্ট জোনের ওপরের তলা থেকে ১৮ জন প্রাণে বাঁচেন। নিহতদের মধ্যে ৭৭ দেশের নাগরিক ছিলেন। শুধু নিউইয়র্ক সিটিরই ৪৪১ উদ্ধারকর্মী প্রাণ হারান। পরবর্তী সময়ে হাজারো মানুষ বিষাক্ত ধ্বংসস্তূপে কাজ করতে গিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হন, যাদের মধ্যে অনেক অগ্নিনির্বাপণকর্মীও ছিলেন।
এ হামলা যুক্তরাষ্ট্র নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচিত হয়।