ঢাকা ১০:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

    যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠদের সম্পদ বিক্রির তৎপরতা : জব্দের আহ্বান বাংলাদেশের

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০২:০৬:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
    • / ২৬২ বার পড়া হয়েছে

    ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যে মালিকানাধীন সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর ও বন্ধকের মাধ্যমে সম্পদ স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন—এমন তথ্য উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম *দ্য গার্ডিয়ান* এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন *ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল*-এর যৌথ অনুসন্ধানে।

    রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের জমি নিবন্ধন সংস্থা *HM Land Registry*-এর নথিপত্র অনুযায়ী, গত এক বছরে এমন অন্তত ২০টি সম্পত্তি লেনদেনের আবেদন জমা পড়েছে, যেগুলোর মালিক বাংলাদেশের সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী শ্রেণির লোকজন। বাংলাদেশে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলমান।

    সালমান এফ রহমান ও ভূমিমন্ত্রীর সম্পদ জব্দ
    ২০২৫ সালের মে মাসে যুক্তরাজ্যের *ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA)* শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে থাকা প্রায় ১,৪৬৯ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করে। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে যুক্তরাজ্যে থাকা প্রায় ২,৭৭৬ কোটি টাকার সম্পদও জব্দ করা হয়।

    সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তি যুক্তরাজ্যে সংগ্রহ করেছেন। এসব সম্পদ নিয়ে তদন্তের মধ্যে তার ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরীও অন্তত চারটি সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করেছেন, যার মধ্যে লন্ডনের রিজেন্টস পার্ক এলাকার ১৬৩ কোটি টাকার একটি জর্জিয়ান টাউনহাউস রয়েছে।

    বসুন্ধরা গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা
    আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারও যুক্তরাজ্যে অন্তত তিনটি উচ্চমূল্যের সম্পত্তি লেনদেনে জড়িত। নাইটসব্রিজে তাদের একটি বিলাসবহুল টাউনহাউস এবং ভার্জিনিয়া ওয়াটারে ১৩০ কোটি টাকার একটি ম্যানশনও এই তালিকায় রয়েছে। দুদক বর্তমানে বসুন্ধরা পরিবারের বিরুদ্ধে আলাদা তদন্ত করছে।

    বেক্সিমকোর সম্পদ জব্দ
    বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানের পরিবারের আরও তিনটি সম্পত্তি লেনদেনের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লন্ডনের মেফেয়ারে অবস্থিত ৫৭১ কোটি টাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট, যা ইতোমধ্যেই *NCA* জব্দ করেছে।

    যুক্তরাজ্যে আরও জব্দের আহ্বান
    বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ঢাকায় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব ব্যক্তির সম্পত্তি জব্দ রাখতে। তার ভাষায়, “এ ধরনের লেনদেন বন্ধ করার পদক্ষেপ আমাদের সম্পদ ফেরত পাওয়ার আশা জাগায়।”

    রাজনৈতিক চাপ নাকি ন্যায্য তদন্ত?
    অভিযুক্তদের আইনজীবীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন।

    ব্রিটিশ এমপিদের অবস্থান
    ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সর্বদলীয় দুর্নীতি পর্যালোচনা গ্রুপের সভাপতি এমপি জো পাওয়েল এই পরিস্থিতিকে “উদ্বেগজনক” বলে উল্লেখ করেন। তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সন্দেহভাজন সম্পত্তি জব্দের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠদের সম্পদ বিক্রির তৎপরতা : জব্দের আহ্বান বাংলাদেশের

    আপডেট সময় ০২:০৬:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

    ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যে মালিকানাধীন সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর ও বন্ধকের মাধ্যমে সম্পদ স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন—এমন তথ্য উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম *দ্য গার্ডিয়ান* এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন *ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল*-এর যৌথ অনুসন্ধানে।

    রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের জমি নিবন্ধন সংস্থা *HM Land Registry*-এর নথিপত্র অনুযায়ী, গত এক বছরে এমন অন্তত ২০টি সম্পত্তি লেনদেনের আবেদন জমা পড়েছে, যেগুলোর মালিক বাংলাদেশের সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী শ্রেণির লোকজন। বাংলাদেশে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলমান।

    সালমান এফ রহমান ও ভূমিমন্ত্রীর সম্পদ জব্দ
    ২০২৫ সালের মে মাসে যুক্তরাজ্যের *ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA)* শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে থাকা প্রায় ১,৪৬৯ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করে। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে যুক্তরাজ্যে থাকা প্রায় ২,৭৭৬ কোটি টাকার সম্পদও জব্দ করা হয়।

    সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তি যুক্তরাজ্যে সংগ্রহ করেছেন। এসব সম্পদ নিয়ে তদন্তের মধ্যে তার ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরীও অন্তত চারটি সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করেছেন, যার মধ্যে লন্ডনের রিজেন্টস পার্ক এলাকার ১৬৩ কোটি টাকার একটি জর্জিয়ান টাউনহাউস রয়েছে।

    বসুন্ধরা গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা
    আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারও যুক্তরাজ্যে অন্তত তিনটি উচ্চমূল্যের সম্পত্তি লেনদেনে জড়িত। নাইটসব্রিজে তাদের একটি বিলাসবহুল টাউনহাউস এবং ভার্জিনিয়া ওয়াটারে ১৩০ কোটি টাকার একটি ম্যানশনও এই তালিকায় রয়েছে। দুদক বর্তমানে বসুন্ধরা পরিবারের বিরুদ্ধে আলাদা তদন্ত করছে।

    বেক্সিমকোর সম্পদ জব্দ
    বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানের পরিবারের আরও তিনটি সম্পত্তি লেনদেনের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লন্ডনের মেফেয়ারে অবস্থিত ৫৭১ কোটি টাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট, যা ইতোমধ্যেই *NCA* জব্দ করেছে।

    যুক্তরাজ্যে আরও জব্দের আহ্বান
    বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ঢাকায় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব ব্যক্তির সম্পত্তি জব্দ রাখতে। তার ভাষায়, “এ ধরনের লেনদেন বন্ধ করার পদক্ষেপ আমাদের সম্পদ ফেরত পাওয়ার আশা জাগায়।”

    রাজনৈতিক চাপ নাকি ন্যায্য তদন্ত?
    অভিযুক্তদের আইনজীবীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন।

    ব্রিটিশ এমপিদের অবস্থান
    ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সর্বদলীয় দুর্নীতি পর্যালোচনা গ্রুপের সভাপতি এমপি জো পাওয়েল এই পরিস্থিতিকে “উদ্বেগজনক” বলে উল্লেখ করেন। তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সন্দেহভাজন সম্পত্তি জব্দের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।