০১:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

সাত মাসে ১৪৩ কেজি সোনা জব্দ, চোরাচালান থামছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০১:৪১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে সোনা চোরাচালান অব্যাহত রয়েছে। বিমানবন্দর এবং সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত ধরা পড়ছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সোনা। আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র সাত মাসেই শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মিলে জব্দ করেছে ১৪৩ কেজি সোনা, যার বাজারমূল্য ১৯৬ কোটি টাকার বেশি।

শুধু গত ফেব্রুয়ারিতে দুটি অভিযানে ধরা পড়ে ৫ কেজি ৬২৪ গ্রাম সোনা। ১১ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ৩ কেজি সোনাসহ আটক হন এক যাত্রী।

আর ২৭ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার একটি গোয়ালঘর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় আরও ২ কেজি সোনা। তবে এসব ঘটনায় মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।

বিজিবি ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া চোরাচালান রোধ করা কঠিন। অভিযানের খবর পেলে অনেক সময় বাহকেরা সোনা ফেলে পালিয়ে যান, ফলে ধরা পড়ে কেবল বাহক, মূল চক্র থেকে যায় অজ্ঞাত।

বিগত পাঁচ বছরে বিজিবি দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে জব্দ করেছে ৭২৫ কেজি সোনা, আর শুল্ক গোয়েন্দারা দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার করেছে আরও ৮৪০ কেজি। শুধু শাহজালাল বিমানবন্দর থেকেই গত দুই বছরে ৪৩৬ কেজি সোনা জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টমস হাউস। গড় হিসেবে বছরে প্রায় ৫৮২ কেজি সোনা ধরা পড়ছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ভারতে সোনার চাহিদা এবং আমদানি শুল্ক বেশি হওয়ায় চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে সোনা পাচার হয় প্রতিবেশী দেশে। ভারতীয় ইকোনমিক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, বছরে দেশটিতে ৮০–৯০ হাজার কেজি সোনা চোরাই পথে প্রবেশ করে, যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রুটে আসে।

সীমান্তে নজরদারির দুর্বলতা ও সীমিত মানবসম্পদও চোরাচালান রোধে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি’র পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল এস এম শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, একটি বর্ডার আউটপোস্ট (বিওপি) থেকে আরেকটি বিওপির দূরত্ব ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার। ফলে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি কঠিন।

চুয়াডাঙ্গা, যশোর, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহের অন্তত ৫০টি সীমান্ত রুট দিয়ে নিয়মিতভাবে সোনা পাচার হয়ে থাকে। যদিও মাঝেমধ্যে বাহক ধরা পড়ে, মূল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। যেমন ফেব্রুয়ারিতে চুয়াডাঙ্গায় ১৮টি সোনার বারসহ দুজন গ্রেপ্তার হলেও, তাদের পেছনের চক্র শনাক্ত করা যায়নি।

বিমানবন্দরেও একই চিত্র। ৩ ডিসেম্বর ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাত কেজি সোনাসহ চারজন গ্রেপ্তার হলেও, তদন্তে তাদের মালিক বা নিয়ন্ত্রক চক্রের হদিস মেলেনি।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

সাত মাসে ১৪৩ কেজি সোনা জব্দ, চোরাচালান থামছে না

আপডেট সময় ০১:৪১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশে সোনা চোরাচালান অব্যাহত রয়েছে। বিমানবন্দর এবং সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত ধরা পড়ছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সোনা। আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র সাত মাসেই শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মিলে জব্দ করেছে ১৪৩ কেজি সোনা, যার বাজারমূল্য ১৯৬ কোটি টাকার বেশি।

শুধু গত ফেব্রুয়ারিতে দুটি অভিযানে ধরা পড়ে ৫ কেজি ৬২৪ গ্রাম সোনা। ১১ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ৩ কেজি সোনাসহ আটক হন এক যাত্রী।

আর ২৭ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার একটি গোয়ালঘর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় আরও ২ কেজি সোনা। তবে এসব ঘটনায় মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।

বিজিবি ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া চোরাচালান রোধ করা কঠিন। অভিযানের খবর পেলে অনেক সময় বাহকেরা সোনা ফেলে পালিয়ে যান, ফলে ধরা পড়ে কেবল বাহক, মূল চক্র থেকে যায় অজ্ঞাত।

বিগত পাঁচ বছরে বিজিবি দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে জব্দ করেছে ৭২৫ কেজি সোনা, আর শুল্ক গোয়েন্দারা দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার করেছে আরও ৮৪০ কেজি। শুধু শাহজালাল বিমানবন্দর থেকেই গত দুই বছরে ৪৩৬ কেজি সোনা জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টমস হাউস। গড় হিসেবে বছরে প্রায় ৫৮২ কেজি সোনা ধরা পড়ছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ভারতে সোনার চাহিদা এবং আমদানি শুল্ক বেশি হওয়ায় চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে সোনা পাচার হয় প্রতিবেশী দেশে। ভারতীয় ইকোনমিক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, বছরে দেশটিতে ৮০–৯০ হাজার কেজি সোনা চোরাই পথে প্রবেশ করে, যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রুটে আসে।

সীমান্তে নজরদারির দুর্বলতা ও সীমিত মানবসম্পদও চোরাচালান রোধে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি’র পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল এস এম শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, একটি বর্ডার আউটপোস্ট (বিওপি) থেকে আরেকটি বিওপির দূরত্ব ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার। ফলে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি কঠিন।

চুয়াডাঙ্গা, যশোর, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহের অন্তত ৫০টি সীমান্ত রুট দিয়ে নিয়মিতভাবে সোনা পাচার হয়ে থাকে। যদিও মাঝেমধ্যে বাহক ধরা পড়ে, মূল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। যেমন ফেব্রুয়ারিতে চুয়াডাঙ্গায় ১৮টি সোনার বারসহ দুজন গ্রেপ্তার হলেও, তাদের পেছনের চক্র শনাক্ত করা যায়নি।

বিমানবন্দরেও একই চিত্র। ৩ ডিসেম্বর ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাত কেজি সোনাসহ চারজন গ্রেপ্তার হলেও, তদন্তে তাদের মালিক বা নিয়ন্ত্রক চক্রের হদিস মেলেনি।