ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি

- আপডেট সময় ১২:০০:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
- / ২৯০ বার পড়া হয়েছে
কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টপাল্টি পদক্ষেপ ও চরম উত্তেজনা চলছে। তারই মধ্যে সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। ভারত ও পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাতে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে। তবে ভারতীয় গণমাধ্যম গোলাগুলির এ খবর দিলেও পাকিস্তান থেকে এ বিষয়ে কোনো ধরনের তথ্য জানানো হয়নি।
এনডিটিভি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতের দিকে জম্মু ও কাশ্মিরে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারতীয় সেনা চৌকিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনারা। এরই পাল্টা জবাব দিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী গুলিবর্ষণ করে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছিল। প্রত্যুত্তরে ভারতীয় সেনাবাহিনীও এর যথাযথ জবাব দিয়েছে।
পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান মধ্যে গত দুদিন ধরে সম্পর্ক যখন চরম উত্তপ্ত অবস্থায় তারই মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটল।
এদিকে ভারত শাসিত কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর প্রথমে ভারত সিন্দু নদীর পানি চুক্তিসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ নেয়। এরই বিপরীতে পাকিস্তানও তার আকশসীমা বন্ধসহ আটটি পদক্ষেপ নেয়। সেইসঙ্গে দুটি দেশই অপর দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের ঘোষণাও দিয়েছে।
ভারতের সিন্দু নদীর পানি চুক্তি বাতিলের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। তারা বলেছে, সিন্ধু নদী ও তার শাখার পানির প্রবাহে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তা যুদ্ধের সমান গণ্য হবে। পাকিস্তানের বিদ্যুৎমন্ত্রী আওয়াইস লেখারি ভারতের এই পদক্ষেপকে ‘জল যুদ্ধ’ এবং ‘অবৈধ’ বলে অভিহিত করেছেন।
সিন্ধু জলচুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, যা ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়। এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদী ব্যবস্থার ছয়টি নদীর পানি ভাগাভাগির নিয়ম নির্ধারণ করে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারত রাভি, বিয়াস ও সতলুজ নদীর পানির নিয়ন্ত্রণ পায়, আর পাকিস্তান পায় সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি। পাকিস্তানের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য এই পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটির ৮০ শতাংশ চাষের জমি এই নদীগুলোর পানির ওপর নির্ভরশীল।
পাকিস্তানের এই পাল্টা পদক্ষেপের পেছনে কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিলের ভয়াবহ হামলার প্রভাব রয়েছে। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ভারতের দাবি, হামলার পেছনে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ জড়িত, যা লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ভারতের অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করা, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা বাতিল, দিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার এবং দুই দেশের হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করার সিদ্ধান্ত।
পাকিস্তানও ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার করেছে এবং ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সব ভিসা বাতিল করেছে।
পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এটি পাঞ্জাব ও সিন্ধের গরিব কৃষকদের ক্ষতি করবে। পাকিস্তান এখন বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তুলতে পারে বলে জানিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী হুসাইন।
এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা পাকিস্তানের কৃষি, খাদ্য ও পানি নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। তবে ভারতের পক্ষে নদীর পানি পুরোপুরি বন্ধ করা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব নয়, কারণ এর জন্য বাঁধ নির্মাণে বছরের পর বছর লাগবে। এটি মূলত পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।